Press "Enter" to skip to content

সুন্দরবনের কুমিরমারী দ্বীপে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,সুন্দরবন : মানুষ মানুষের পাশে। ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবার সুন্দরবনে নদিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।প্রায় চার ঘন্টা জলপথ দিয়ে সুন্দরবনের কুমিরমারী দ্বীপে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

গ্রামের লাগোয়া সুন্দরবনের ঘন জঙ্গল। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসী মানুষ এবং সাধারণ মানুষ বসবাস করেন। এর আগে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে দেখতে পান তাদের যে করুণ পরিস্থিতি । তখন থকেই তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেয় এইসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর।এরপর থেকেই গ্রাম বাসীদের আবেদনে তাঁরা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে গোটা বছর তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করে এবং সেই মতোই এবারও তাঁরা যায় সুন্দরবনের সেই আদিবাসী গ্রামে। তাদের উদ্যোগে প্রতিবছর পালন করা হয়ে থাকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস “শিকড়ের টানে”। উদ্দেশ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্প সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটানো।

ইতিমধ্যেই কুমিরমারি দ্বীপে হাজারের ও বেশি গাছ লাগিয়েছে তাঁরা।প্লাস্টিক মুক্ত দ্বীপ এই স্লোগান উঠিয়ে মানুষকে সজাগ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।এখানে বাস করেন প্রায় হাজারের বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ জন। সুন্দরবনের আদিবাসীদের নিজ রাজ্য ছেড়ে এ রাজ্যে নিয়ে আসার এক ঐতিহাসিক কাহিনী আছে যার সূত্রপাত হয়েছিল তৎকালীন ইংরেজ সরকারের হাত ধরে। জানা যায় সুন্দরবনের আদিবাসীদের আনা হয়েছিল ভূমি সংস্কারের বিভিন্ন কাজে। ভাবতে অবাক লাগে যারাই ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে বাঘের পেটে গিয়ে গভীর জঙ্গলকে জনবসতির জমিতে পরিণত করে তাঁরাই আজ তাদের ভূমি থেকে বঞ্চিত। এই সমস্ত মানুষদের মূলত চাষাবাদ আর মাছ ধরাই তাদের এখন প্রধান জীবিকা হয়ে উঠেছে।

সুন্দরবনের প্রতিবছর নানান ধরনের দুর্যোগ লেগে থাকে আর যার কারণে নোনা জল জমিতে ঢুকে এবং অন্যদিকে নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে পেটের দায়ে দ্বীপ ছেড়ে ভিন দেশে গিয়ে পড়ে আছেন কাজের তাগিদে। দ্বীপের শিশুরা কেউ মা-বাবার সঙ্গে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে কেউ আবার আত্মীয়ের কাছে পড়ে রয়েছে যার ফলে তাদের পড়াশোনা সংকটে। আর সেই কারণেই কলতান এর একটি শাখা এই দ্বীপে স্থাপিত করা হয়।যেখানে আদিবাসী শিশুদের শিল্প শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখা যায়। শিশুরা বাদ্যযন্ত্র যেমন ধামসা মাদল সঙ্গে ঝুমুর গানের শিক্ষা নেয় এই বিদ্যালয় থেকেই। যদিও বর্তমানে সেখানে আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিশুদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। দিশারী সংস্থার প্রচেষ্টায় এখানকার আদিবাসী শিল্পীদের আজ ভারত সরকারের সেন্ট্রাল বিওডো অফ কমিউনিকেশনের অন্তর্গত সং এন্ড ড্রামা ডিভিশনে শিল্পী হিসেবে তাদেরকে নথিভুক্ত করানোর প্রচেষ্টা সফল হয়েছে, যা সুন্দরবনে এই প্রথমবার।

এ প্রসঙ্গে সংগঠনের এক কর্ণধার জানান, “এই কুমিরমারি দ্বীপের সঙ্গে এক মজবুত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ফলে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে কঠিন কাজ সম্পূর্ণ করা হচ্ছে বারংবার। আয়লা এবং ইয়াসের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে জয় করে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রিমেল দুর্যোগকেও জয় করেছি আমরা। ছাদবিহীন ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়িগুলোতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন শুকনো খাবার, মশারি, মহিলাদের শাড়ি শিশুদের জন্য ঔষধপত্র ও পড়াশোনা সামগ্রী পাশাপাশি বেশ কিছু ত্রিপল ও তুলে দিয়েছি আমরা। এবং ভবিষ্যতেও আমরা তাদের পাশে থাকব।”

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *