Press "Enter" to skip to content

১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই আবর্জনার পাহাড়, আসানসোল পুরনিগমের ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

আসানসোল : কালিপাহাড়ির অদূরে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে আসানসোল পুরনিগমের ডাম্পিং গ্রাউন্ড।

চার দশকের বেশি সময় ধরে জমে থাকা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আবর্জনা পাহাড় প্রমাণ হয়েছে। যা দেখে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া হাওড়ায় ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দুর্ঘটনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এই আবর্জনার পাহাড়।

আসানসোল পুরনিগমের তরফে বলা হয়েছে, তারা এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। নিয়মিত নজরদারিও করা হয়। হাওড়ার ঘটনার শিক্ষা নিয়ে এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে কি করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে আসানসোল পুরনিগম কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। তা জমা করা হয় কালিপাহাড়ির কাছে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে।

প্রায় গত চার দশকের বেশি সময় ধরে এই আবর্জনা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জমতে জমতে পাহাড় প্রমাণ হয়ে গেছে। কোনও কারণে যদি আসানসোলের এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড হাওড়ার মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে তার থেকেও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কালিপাহাড়ির এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের একেবারে পাশে জনবসতি নেই। এখানে কোনও মানুষ বসবাস করেন না। তবে পাশেই রয়েছে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক। তাই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে কোনওকিছু হলে জাতীয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের বেশ কিছুটা দুরে জনবসতি এলাকা রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন যে, কে বা কারা এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আগুন লাগিয়ে দেয়। তা থেকে এলাকায় দূষণ হয়। তার ফলে আশপাশের পরিবেশে প্রভাব ফেলে। সেই সঙ্গে এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে বিশেষ করে বর্ষাকাল ও গরমকালে দুর্গন্ধ ছড়ায় এতটাই সেই দুর্গন্ধ এর পাশ দিয়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যারা গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন, তারা গাড়ির কাঁচ বন্ধ করে দেন। তা সত্ত্বেও দুর্গন্ধ পান। আর যারা দুচাকা গাড়িতে যাতায়াত করেন তারা নাকে রুমাল বেঁধে কোনও মতে এলাকাটি পার করেন।

তবে বহিরাগত এই জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আবর্জনার পাহাড় দেখে হয়তো ভাবেন এটা কোনও খোলা মুখ খনি এলাকার থেকে ওভার বার্ডেন বা মাটি পাথর এনে ফেলা হয়েছে।

আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক তথা পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী চন্দ্রশেখর কুন্ডু বলেন, কালিপাহাড়ির এই এলাকাটি ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কারণ এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা বাড়ির জৈব বর্জ্য পদার্থ ফেলা হচ্ছে। যা বছরের পর বছর পড়ে থাকায় মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে । কোন কারণেই সেই গ্যাস অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে ফাটল দেখা দিতে পারে বা আগুন লাগার সম্ভাবনাও থাকে।

তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে আসানসোল পুরনিগম যদি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নাগরিকদের সচেতন করে জানায় যে তাদের প্লাস্টিক সহ অন্যান্য জিনিস তারা পুরনিগমকে দিক। কিন্তু বাড়ির যেসব সবজি কাটা হয় তার খোসা বা জৈব জিনিসগুলো নিজেদের বাগান বা বাড়ির এলাকাতে রেখে সার তৈরি করেন তাহলে আবর্জনা চাপ অনেকটাই কমবে। ওই সার দিয়ে সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের সবজি বা চাষে কাজে লাগাতে পারবে।

আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি এই প্রসঙ্গে বলেন, আমি যখন মেয়র ছিলাম তখন এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে একটা ডিপিআর বা ডিটেইলস্ প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে কলকাতায় পাঠিয়েছিলাম। আসানসোল পুরনিগমের এই কাজটা করার কথা ছিল। তার জন্য আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা মুম্বাইতে গিয়ে কিভাবে কাজ হয় তা দেখেও এসেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল কাজটা শুরু হয়েছে, কিন্তু সেই কাজ আর পুরনিগমের হাতে নেই। স্পেশাল আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি তথা সুডা এই কাজটা দেখছেন। যে গতিতে কাজটা হওয়ার কথা সেই গতিতে কাজটা মোটেই হচ্ছে না। আর যেহেতু কাজটা ওরা করছে, তাই পুরনিগম আর কিছু করতে পারে না। তাই তারা কিছু বলতেও পারছেন না। আসানসোলের বিপদ এড়াতে, বিশেষ করে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের মতো হাই প্রোফাইল জায়গা থেকে অবিলম্বে এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আবর্জনার পাহাড় কেটে কেটে সবটাই সরিয়ে দেওয়ার দরকার। তবেই সবদিক থেকেই ভালো হবে।

এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের দুই ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক বলেন, পুরনিগমের পক্ষ থেকে ইঞ্জিনিয়াররা নিয়মিত বিষয়টি দেখেন। পর্যাপ্ত নজরদারি রয়েছে। প্রয়োজনে আরো নজরদারি বাড়ানো হবে। পাশে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক থাকলেও, কোনও সমস্যা নেই। দূরে রয়েছে জনবসতি এলাকা। তারা আরো বলেন, আবর্জনার রি-সাইকেল করা হয়। আসতে আসতে এখান থেকে কেটে কেটে সব জিনিস সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এখানে ফাটল হওয়া বা আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটার কোনও ভয় নেই বলে তারা আশ্বস্ত করেন।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *