Press "Enter" to skip to content

ঘণ্টাখানেক বাঘে-মানুষে লড়াই! সুন্দরবনের কুলতলিতে আবার বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মৎস্যজীবীর

আবারও বাঘের আক্রমণে মৃত এক মৎস্যজীবী!

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি: সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। আবারও বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবীর। মৃতের নাম শ্রীদাম হালদার (৪৬)। মৃত মৎস্যজীবির বাড়ি কুলতলি থানার গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের গায়েনের চক গ্রামে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি কুলতলির গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের গায়েনের চকের বাসিন্দা মৎস্যজীবী শ্রীদাম হালদার , বিশ্বজিত জানা, হাসান মোল্লা, প্রদীপ সরখেলের সঙ্গে নৌকা নিয়ে কুলতলি থেকে সুন্দরবন জঙ্গলের নদী খাঁড়িতে মাছ -কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। গত প্রায় ৬ দিন ধরে তাঁরা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীখাঁড়িতে মাছ -কাঁকড়া ধরছিলেন। সোমবার ভোর ৬টা নাগাদ সুন্দরবনের নদীখাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরছিলেন। সেই সময় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল থেকে একটি বাঘ শ্রীদাম হালদারকে নিশানা করতে থাকে।

এদিকে চার মৎস্যজীবী আনমনে নদীতে কাঁকড়া ধরার দ্রোণ ফেলতে ব্যস্ত। আচমকা সুন্দরবন জঙ্গল থেকে দ্রুত গতিতে বাঘ বেরিয়ে আসে। মুহূর্তে সকলের অলক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে শ্রীদামের ঘাড়ে। ঘাড় মটকে তাঁকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাঘ তার শিকার নিয়ে একটু গভীর জঙ্গলের দিকে যেতেই শ্রীদামের সঙ্গীরা বাঘের কবল থেকে শ্রীদামকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান। গাছের ডাল ভেঙে বাঘের পিছু নিয়ে তাড়া করে তাঁরা।

বাঘ তার শিকার ছাড়তে নারাজ। রুদ্রমূর্তি ধরে বাঘ মৎস্যজীবীদের সামনে রুখে দাঁড়ায়। দীর্ঘ প্রায় ঘন্টাখানেক চলে বাঘে-মানুষে লড়াই। অবশেষে মৎস্যজীবীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাঘ শিকার ছেড়ে গর্জন করতে করতে পিছু হটতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এক সময় বাঘ ভয় পেয়ে দৌড়ে সুন্দরবনে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায়।আর শ্রীদামের সঙ্গী মৎস্যজীবীরা বাঘের কবল থেকে সঙ্গীকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলেন।

ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ক্ষতবিক্ষত মৎস্যজীবী। সোমবার বেলার দিকে মৃত মৎস্যজীবীর দেহ নিয়ে ফেরেন সঙ্গীরা। মঙ্গলবার মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

অন্য দিকে, মৃত মৎস্যজীবীর বাড়িতে ৭০ বছরের বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ছাড়াও ১০ বছরের প্রতিবন্ধী এক মেয়ে ও ৭ বছরের আরেক মেয়ে-সহ চার কন্যাসন্তান রয়েছেন। আচমকা এই দুর্ঘটনার কথা শুনে শোকে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সকলেই। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় হালদার পরিবার-সহ সমগ্র গায়েনের চক এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।আর মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের হাতে দ্রুত সরকারি ক্ষতি পূরণের টাকা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল। তিনি বলেন, বারবার একই ঘটনা ঘটে চলেছে। বিকল্ল কর্মসংস্থান না থাকায় সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা জঙ্গলে চলে যান রোজগারের আশায়। তাই তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের নজর দেওয়ার দরকার। পাশাপাশি এঁদের মৃত্যুর পরে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের টালবাহানা করলে চলবে না। দ্রুত তাঁদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দিতে হবে।

আরও পড়ুন: আবার সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৃত এক মৎস্যজীবী, দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবি মানবাধিকার সংগঠনের

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *