Press "Enter" to skip to content

রানিগঞ্জ শিল্প তালুকে বেসরকারি কারখানায় মর্মান্তিক ঘটনা, বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মৃত ২ কর্মী

রানিগঞ্জ ও আসানসোল: পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্প তালুকে একটি বেসরকারি লৌহ ইস্পাত কারখানায় মর্মান্তিক ঘটনা । শনিবার গভীর রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ দুই কর্মী কর্মরত অবস্থায় এক পাইপ সরানো বা লোডিং – আনলোডিংয়ের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, মৃত দুই কর্মীর একজন ঠিকা কর্মী। বছর ২০ র দেবজ্যোতি সরকার বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া থানার তালেন্ডি গ্রামের বাসিন্দা। অপরজন বিহারের সারান জেলার বছর ৫০ র রামেশ্বর প্রসাদ সিং। এই ঘটনায় ঐ বেসরকারি কারখানা কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতি অভিযোগ উঠেছে। দুই কর্মীর পরিবারের সদস্যরা আর্থিক ক্ষতি পূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে করেন। তার জেরে কারখানায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ কারখানায় ছুটে যায়। রবিবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে দেবজ্যোতি সরকারের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। তবে সুপারভাইজার পদে কর্মরত রামেশ্বর প্রসাদ সিংয়ের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত এদিন হয়নি।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন প্রবল বৃষ্টির পরে রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্প তালুকের ঐ বেসরকারি লৌহ ইস্পাত কারখানার ৩ নম্বর ইউনিটে শনিবার গভীর রাত দেড়টা নাগাদ পাইপ সরানোর কাজ করছিলেন ঠিকা কর্মী কর্মী দেবজ্যোতি সরকার। সেই সময় সে সেখানে বিদ্যুতবাহী তারের সংস্পর্শে চলে আসেন। এতে তিনি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হন।

সেই ঘটনাটি কারখানার সিনিয়র সুপারভাইজার রামেশ্বর প্রসাদ সিং লক্ষ্য করে সেখানে দৌড়ে যান। তিনি দেবজ্যোতিকে সরাতে গেলে সেও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়। সেই সময় অন্য কর্মীরা তা দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসেন। তারা কারখানা কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে রানিগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই মৃতের পরিবারের সদস্যরা কারখানায় আসেন। তাদের সঙ্গে কারখানার অন্য কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। রবিবার সকালে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি রানিগঞ্জ ব্লকের সভাপতি তথা আসানসোল পুরনিগমের ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জ্যোতি সিং সহ স্থানীয় নেতৃত্বরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছান। তারা দুজনের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে কারখানা কতৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আইএনটিটিইউসি নেতারা দাবি আদায়ে সচেষ্ট হয়ে কারখানা কতৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

জানা গেছে, মৃত ঠিকা কর্মী দেবজ্যোতি সরকার এই কারখানায় সাত দিন আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত, কারখানা কর্তৃপক্ষ মৃত দুই কর্মীদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সাথে দেহ সৎকার সহ অন্য কাজের জন্য আরো ৫০ হাজার টাকা ও ঠিকা সংস্থার পক্ষ থেকে জীবন বীমা বাবদ টাকা কর্মীদের পরিবারকে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে কারখানার আধিকারিক কৃষাণ কুমার খাটানা বলেন, শনিবার গভীর রাতে পাইপ লোডিং আনলোডিংয়ের কাজ চলছিলো। সেই সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন ঠিকা কর্মী দেবজ্যোতি সরকার মেন সুইচ দেখে তা খুলতে যায়। তাতে সে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট। তা দেখে তাকে সুপারভাইজার রামেশ্বর প্রসাদ সিং বাঁচাতে যায়। তখন সেও বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট। পরে দুজনেরই মৃত্যু হয়। কারখানার তরফে দুজনের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
যদিও, কারখানা কতৃপক্ষের এই দাবিকে নস্যাৎ করেন মৃত ঠিকা কর্মীর দাদা রাজা দাস ও আইএনটিটিইউসি নেতা জ্যোতি সিং। তারা বলেন, পাইপ সরাতে গিয়েই এই দুজন বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়েছে। এই ঘটনায় কারখানা কতৃপক্ষের গাফিলতি আছে। কারখানা কতৃপক্ষের কর্মীদের নিরাপত্তার দিকে আরো বেশি করে নজর দেওয়া দরকার। যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।

পুলিশ জানায়, কারখানায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *