Press "Enter" to skip to content

রানিগঞ্জে পরিত্যক্ত খনি থেকে কয়লা তুলতে গিয়ে মৃত ২, ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা

ওসিপিতে বড়োসড়ো দুর্ঘটনা। নিজস্ব ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রানিগঞ্জ: নারায়ণকুড়ির দুর্ঘটনার পর এ বার ছ’মাস ধরে বন্ধ থাকা পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার ইসিএলের কুনুস্তোড়িয়া এরিয়ার বাঁশরা কোলিয়ারির খোলা মুখ খনি বা ওসিপিতে বড়োসড়ো দুর্ঘটনা। এই খোলা মুখ কয়লাখনিতে অবৈধ কয়লা কাটতে গিয়ে মৃত্যু দু’জনের। আহত হয়েছে আরও দুই।

মৃতদের নাম হল রাজেশ তুড়ি (৩৯) ও বিনোদ ভুঁইয়া (২৬)। তাঁরা রানিগঞ্জ থানার আমড়াসোঁতার বাঁশরা কোলিয়ারি ও বাঁশরা ভুঁইয়া পাড়ায় বাসিন্দা। আহত দুজনের নাম হল রাম প্রবেশ বার্ণওয়াল ও কারু ভুঁইয়া। তাঁরা রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে। রবিবার গভীর রাত ১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার সকালে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এ দিকে, এই দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা জাহির করতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমুল কংগ্রেসের পাশাপাশি দুই বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও সিপিএম ময়দানে নামে। এ দিন সকাল থেকে মৃত দু’জনের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও আহত দু’জনের চিকিৎসার দাবিতে শাসক ও বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীরা আন্দোলনে সামিল হন। তারই মধ্যে দু’জনের কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে তরজায় জড়ান পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।

বাঁশরা এলাকার বাসিন্দারা বলেন, চারজন রবিবার রাতে বন্ধ থাকা ওই খোলামুখ কয়লাখনি এলাকায় গেছিলেন। তখন তাদের উপর কয়লা ও পাথর এসে পড়ে। চারজনই আহত হন। তার মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বাকি দু’জন।

এই ঘটনার পরে এ দিন সকালে আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল প্রথমে এলাকায় এসে মৃত দু’জনের বাড়িতে যান। তাঁদের পরিবারের সদস্য ও পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তিনি এই ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি এই ঘটনার জন্য সরাসরি রাজ্যের শাসক দল তৃণমুল কংগ্রেসকে দায়ী করেন। পরে তিনি কোলিয়ারির ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের মধ্যে গোটা ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরে বিজেপি বিধায়ক বলেন, “কোলিয়ারি ম্যানেজার আমাকে জানিয়েছেন,۔ওই ওসিপিতে যে, এমন ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁদের জানা নেই । কেউ তাঁকে এই ব্যাপারে কিছু জানায়নি। পুলিশ তো দু’জনকে তাঁদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন মনে হচ্ছে, ঘটনার মধ্যে কিছু আছে। তৃণমুল ও সিপিএমের লোকেরা কিছু করার চেষ্টা করছে।”

ঘটনার পরে সিপিএম নেতা সুপ্রিয় রায়ের নেতৃত্বে সিপিএম কর্মী ও সমর্থকেরা বাঁশরা কোলিয়ারি ম্যানেজার ও এজেন্ট অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন। তাঁরাও আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। এই ঘটনায় সিপিএমের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা বারবার খোলামুখ কয়লাখনির এই অংশটিকে ভরাট করার জন্য খনি কর্তৃপক্ষর কাছে বিক্ষোভ আন্দোলন করেছেন। তার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর দায়িত্ব নিতে হবে খনি কর্তৃপক্ষকে, বলেই দাবি করেন তাঁরা।

পাশাপাশি কিছু দূরেই এজেন্ট কার্যালয়ের গেটের সামনে একইভাবে পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমুল যুব কংগ্রেসের কার্যকরী সম্পাদক যীশু দত্তর নেতৃত্বে ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। পরে বেলার দিকে এলাকায় আসেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বিজেপি বিধায়ক কাকে বাঁচাতে চাইছেন? নিজের দল, না কি ইসিএল কর্তৃপক্ষ কাকে? ওই জায়গা ইসিএলের। তাই সেখানে যে ঘটনা ঘটেই থাকুক না কেন, তার দায় ইসিএলের। আমাদের দাবি, মৃত দু’জনের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতি পূরণ দিতে হবে ইসিএলকে।”

এ দিকে, দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে দুই যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। সেখানে ময়নাতদন্তকারী আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ অফিসারকে রাজেশ তুড়ির স্ত্রী রীনা তুড়ি ও বিনোদ ভুঁইয়ার বাবা রোহিত ভুঁইয়া বলেন, “রবিবার রাতে তারা বেরিয়েছিল। পরে জানতে পারি খোলামুখ খনিতে কয়লা কাটতে গিয়ে চাপা পড়েছে।”

আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ এই ঘটনায় দু’টি আলাদা আলাদা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছে। ঘটনা নিয়ে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় বিনোদ ভূঁইয়া ও রাজেশ তুড়ি নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন রাম প্রবেশ বার্ণওয়াল, ও কারু ভূঁইয়া। বাড়ির লোকেরা জানিয়েছে তাঁরা কয়লা তুলতে গিয়েছিলেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

ইসিএলের তরফে বলা হয়েছে, ঠিক কি ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

More from জেলায় জেলায়More posts in জেলায় জেলায় »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *