Press "Enter" to skip to content

দামোদর নদে অবৈধ বালি উত্তোলনে বিপন্ন জনজীবন,অবশেষে বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট

অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস সংবাদদাতা, বড়জোড়া (বাঁকুড়া): বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন চকবাজার মানাচরে কৃষক শ্যামল মণ্ডল। বৃহঃস্পতিবার ছিল তার শুনানি। হাইকোর্টের রায় প্রসঙ্গে মামলাকরির আইনজীবী সাহেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য মামলার রায় দিয়েছেন। নির্দেশনামা W.P.A.(P)-163/2024, তাতে আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে বড়জোড়া এলাকায় দামোদরে অবৈধ বালি উত্তোলনে জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বালির খাদে বেআইনি কিছু যদি পাওয়া যায়, সেটা দেখতে বলা হয়েছে। ওইসব ঘাট এলাকায় যাবতীয় যন্ত্রপাতি, মেশিন ও পরিবহন গাড়ি বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের জেরে বিপন্ন জনজীবন। পাশাপাশি সেচের জলের টান পড়ছে কৃষিজমিতে। তাই শেষ পর্যন্ত পুলিশের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে হাইকের্টের দ্বারস্থ হন কৃষকরা। অবশেষে দামোদরে অবৈধ বলি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিল কোলকাতা হাইকোর্ট।

আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশের সঙ্গে নদীতে যাবতীয় মেশিন ও পরিবহন গাড়ী বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশিকাই সার। দামোদর এখন বালি মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্য।

বাঁকুড়ার সোনামুখী ও বড়জোড়া দুই থানার ওপর দামোদরে অবাধে চলছে অবৈধ বালি উত্তোলন। নদী গর্ভে ছাঁকনি মেশিন বসিয়ে চলছে বালি উত্তোলনের কাজ।

তারপর ওই বালি লরি ডাম্পারে ভর্তি হয়ে পাচার হচ্ছে। আর তার জেরে বিপন্ন হচ্ছে নদী তীরবর্তি মানাচরের জনজীবন। অবৈধ বালি বোঝাই গাড়ি যাতায়াতে ভেঙে পড়ছে গ্রামের রাস্তা। অতিষ্ট সাধারণ পথচলতি মানুষ থেকে কচি কাঁচা স্কুল পড়ুয়ারা ।

অনেকদিন যাবৎ গ্রামবাসীরা দফায় দফায় অভিযোগ ও আন্দোলন করেও সুরাহা মেলেনি । উল্টে আস্টে পিস্টে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

এমনই নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে দামোদরের চক মানাচরে। ঘটনায় জানা গেছে, দামোদর নদে ড্রেজিংয়ের নামে বালি তোলার অনুমতি পায় এক বেসরকারি সংস্থা। আর ওই ড্রেজিংয়ের নামে নিম্ন দামোদরের পলাশডাঙা ও গোপালপুর মৌজায় ওই সংস্থার কমবেশি ২০টি পাম্প ও ছাঁকনি মেশিন দিয়ে বালি তোলার কাজ চলছিল বলে অভিযোগ।

এদিকে পাম্প বসিয়ে এবং যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালি উত্তোলনে গ্রিন ট্রাইবুনালের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু গ্রিন ট্রাইবুনালের সেই নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে মেশিন বসিয়ে অবাধে চলে বালি উত্তোলন। নদীতে পাম্প বসিয়ে জলমিশ্রিত বালি তোলা হয়। জলবালি মিশ্রিত বিশেষ ছাঁকনির সাহায্যে বালি আলাদা করা হয় নদীতে।

তারপর ওই বালি জেসিবি দিয়ে লরিতে ভর্তি হয়ে চলে যায় শহরে। আর পাম্প বসিয়ে বালি তোলার ফলে নদীতে অচিরে খাদ তৈরী হয়। আর এই খাদ তৈরী হওয়ায় আশপাশের কৃষিজমি এলাকায় ভুগর্ভস্ত জলের টান পড়ছে। ফলে কৃষিকাজের সাবমার্শিবাল ও সেলো পাম্পে জল উঠছে না।

দামেদর নদের উত্তর প্রান্তে পানাগড়- দুর্গাপুর সংলগ্ন মানাচর। ভৌগলিক মানচিত্রে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও সোনামুখী ব্লকের অন্তর্গত। বড়জোড়া ব্লকের ঘুটগড়িয়া পঞ্চায়েতের সিতারামপুর, বড়জোড়া পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপল্লী, বরিশাল পাড়া, পল্লীশ্রী কলোনী, পখন্না পঞ্চায়েতের বড় মানা, পশ্চিম পাড়া, ঢাকা পাড়া, ভৈরবপুর, ভৈরবপুর মানা, সোনামুখী ব্লকের রাঙামাটি পঞ্চায়েতের ডিহিপাড়া উত্তর মানাচর, লালবাবা মানাচর।
এখানে সব মিলিয়ে ১১ টি গ্রাম সাংসদ রয়েছে। প্রায় ১২ হাজার ভোটার সংখ্যা। সবই পুর্ব বঙ্গ থেকে আগত বাসিন্দা।

প্রায় ৬০ বছর ধরে নদীর বুকে বসবাস করছেন এরা । নদী তিরবর্তী গ্রামবাসীরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং জীবিকা নির্বাহ করেন ।
এরা নদীর বালি চরকে উর্বর করে চাষাবাদ করে তুলেছে। আলু, পটল, পেয়াজ, নানা রকম শাক সব্জি ছাড়াও বাদাম চাষও হয়। এই সমগ্র এলাকায় প্রায় ৩০০ একর কৃষি জমি রয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
এই সমস্ত চাষীদের অভিযোগ, নদীতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে চাষজমি এলাকায় জলস্তর হু হু করে নেমে গেছে। ফলে বাদাম চাষে সেচের জলের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

তাদের বক্তব্য, ধার দেনা করে বাদাম চাষ করে এখন জলের টানে চোখে সরষেফুল দেখছেন । গোটা এলাকা জলসঙ্কটে ভুগছে। বালি বোঝাই বেপরোয়া লরি, ডাম্পার, ট্রাক্টর যাতায়াতে ভাঙছে একের পর এক গ্রামের রাস্তা। দুর্ঘটনার শঙ্কায় আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা।

বাসিন্দারা বলেন, বহুবার পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। উল্টে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামবাসীদের গ্রেফতার করছে। গত কয়েকমাস ধরে বড়জোড়ার পল্লীশ্রী, চকবাজার, বরিশাল মানাচরে বালিবোঝাই লরি ডাম্পার যাতায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে এলাকাবাসী।

গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে বার বার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি’র প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ ও
সৌমিত্র খাঁ। কয়েকদিন আগে বড়জোড়া থানাকে নিশানা করে সৌমিত্র খাঁ বলেন, অবৈধ্য বালি তোলার জন্য বড়জোড়া থানার সঙ্গে ২ কোটি টাকার রফা হয়েছে । তার জন্য গ্রামবাসীদের হুমকি দেয় পুলিশ, তাতে রাস্তা খারাপ হলেও হতে পারে। মানাচরের বাসিন্দাদের চাকর মনে করে পুলিশ । এই পুলিশের মদতে গ্রামের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো টন বালি বোঝাই লরি ডাম্পার যাতায়াত করছে।

আবার দিলীপ ঘোষ কাঁকসার বিদবিহারের এক জনসভা থেকে বলেন, এই বালি মাফিয়াদের জন্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে সামগ্র পরিবেশ। তাতে সাধারন মানুষের বিভিন্ন রকমের কষ্ট হচ্ছে। আমরা সাধারন মানুষের সঙ্গে আছি। সাধারন মানুষকে কষ্ট দিয়ে, ভয় দেখিয়ে রাজনীতি হবে না। অবিলম্বে এই অবৈধ বালি কারবার বন্ধ করতে হবে, নচেৎ আন্দোলন হবে, মামলা করা হবে ।

এদিকে বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন চকবাজার মানাচরে কৃষক শ্যামল মন্ডল। ২ মে, বৃহস্পতিবার ছিল তার শুনানি।

হাইকোর্টের চিপ জাস্টিক টিএস শিবগান্নাম ও জাস্টিক হিরন্ময় ভট্টাচার্য মামলার রায় দিয়েছেন। নির্দেশনামা W.P.A.(P)-163/2024, তাতে আগামী ৮ সপ্তাহের মধ্যে বড়জোড়া এলাকায় দামোদরে অবৈধ উত্তোলনে জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

More from UncategorizedMore posts in Uncategorized »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *