কলকাতা: বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এবারের বাজেটে একাধিক চমক রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ বাড়ানো, সরকারি কর্মীদের ডিএ বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত এখন চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলার সামগ্রিক উন্নয়নকে সামনে রেখে সমাজের সর্বস্তরের, সর্বশ্রেণির জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এ বারের বাজেটে।
বিধানসভা বাজেট পেশের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়’। তাঁর মতে, ‘একটা সংসার সামলাতে গেলে, টাকার সংযোজন করতে হয়। আজকে যে বাজেটটা করা হয়েছে, এটা তো চমকে যাওয়ার মতো বাজেট’। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক অন্যতম কয়েকটি বিষয়।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য সরকার। ২০২৪ রাজ্য বাজেটে এবার এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে বিরাট ঘোষণা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ানো হল। যার ফলে ১০০০ টাকা করে পাবেন মহিলারা। অন্যদিকে জনজাতি মহিলাদের জন্য ভাতা বাড়িয়ে করা হল ১২০০ টাকা।
সরকারি কর্মীদের ডিএ বৃদ্ধি : আবার বৃদ্ধি পেল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ। মে মাস থেকে ৪ শতাংশ ডিএ পাবেন সরকারি কর্মীরা। মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য সরকারের সীমিত আর্থিক সামর্থের মধ্যেই আরও ৪ শতাংশ ডিএ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হচ্ছে৷
১০০ দিনের কাজ: ১০০ দিনের শ্রমিকের বকেয়া মেটাতে রাজ্য বাজেটে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জব কার্ড আছে এমন শ্রমিকরা পাবেন টাকা।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভাতা: বাজেটে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভাতা বাড়ল ১০০০ টাকা। পাশাপাশি, এখন থেকে ২০ শতাংশ সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
স্বনিযুক্তিমূলক কাজের জন্য: ‘পশ্চিমবঙ্গ ভবিষ্যত ক্রেডিট কার্ড’ চালু হচ্ছে। বার্ষিক ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল। ১৮-৫০ বছর বছরের ২ লক্ষ যুবক-যুবতী স্বনিযুক্তিমূলক কাজের জন্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ঋণ ব্যাঙ্ক মারফত পাবে। ৪ শতাংশ সুদে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ঋণ পাবে।
চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের মাসিক পারিশ্রমিক: চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি কর্মচারীদের মাসিক পারিশ্রমিক যথাক্রমে ৩ হাজার ও সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে বাড়বে। ৪০ হাজার কর্মী উপকৃত হবে। ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ। সরকারের আওতায় থাকা আইটি কর্মীদের পারিশ্রমিক ক্যাটাগরি অনুযায়ী বাড়ানো হল।
মাইনরিটিস কালচারাল ডেভলপমেন্ট সেন্টার :সংস্কৃতির উন্নয়নে মাইনরিটিস কালচারাল ডেভলপমেন্ট সেন্টার গঠিত হবে। যেখানে মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন এবং পারসি-এই ৬ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য় প্রদর্শিত হবে। ফলে এই সব সম্প্রদায়ের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এই খাতে বরাদ্দ ২০ কোটি।
পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসাথী :পরিযায়ী শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন, পরিযায়ী শ্রমিক পোর্টালে যারা নথিভুক্ত আছে, তাদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হল।
সমুদ্রসাথী প্রকল্প: সমুদ্রসাথী প্রকল্পের ঘোষণা বাজেটে। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীরা নানা প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ করেই সমুদ্রে যান। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন মাস অবধি যেহেতু সমুদ্র যেতে নিষেধ থাকে, তাঁদের পেটেও টান পড়ে। তাই এই প্রকল্প। এর মাধ্যমে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই দুই মাস প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে পাবেন। এর ফলে প্রায় ২ লক্ষ মৎস্যজীবী উপকৃত হবেন। ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এই প্রকল্পে।
Be First to Comment