অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রতীকী ছবি
অমল মাজি (এক্সিকিউটিভ এডিটর, অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস)
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমন একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এবং শিক্ষিত ব্যক্তিকে খুঁজছিলেন, যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে বিজেপি লড়তে পারে |
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছিল , কিন্তু তা বাস্তববায়িত হয়নি | সেসময় সৌরভের বাড়িতেও দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গিয়েছিলেন এবং সৌরভের বাড়িতে খাওয়াদাওয়াও করেন | কিন্তু সৌরভের সঙ্গে আলোচনা করে, সৌরভের চিন্তাভাবনা, ইচ্ছা অনিচ্ছা ইত্যাদি উপলব্ধি করে অমিত শাহ শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন |
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সর্বভারতীয় বিজেপির সেকেন্ডম্যান অমিত শাহ’র জহুরির চোখ | তিনি যেটা চেয়েছিলেন, বিশেষ করে রাজনীতি এবং আইন বিষয়ক জ্ঞান থাকা একজন ব্যক্তি এবং বাঙালির কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজনকে | কারণ মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করছে। ভরসা করছে। এই ধরনের ব্যক্তিত্বকে রাজনীতির ময়দানে এনে বাজিমাত করতে চায় বিজেপি | এটার জন্যই অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এ বার সেটাই হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা |
রাজ্যে এই কয়েক বছরে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তি হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় | গত দু’-তিন বছর ধরে তিনি বেশকিছু বড় মামলা সামলেছেন, যার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের শিক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতি বিষয়ক। যেখানে বড়সড় দুর্নীতি সামনে এসেছে। আর সেই কারণে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এখন জেলে। এমনকী আরও একাধিক মামলায় রাজ্য সরকারের বেশকিছু দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে, সেই কেসগুলি এখন তিনি সামলাচ্ছেন। যার ফলে তিনি অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জেলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক রায়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি | সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বিচার প্রার্থী শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের কাছে একজন “ভগবান” হয়ে ওঠেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই “ভগবান” গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, আগামী ৭ মার্চ বারাসতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাতেই তিনি যোগ দেবেন গেরুয়া শিবিরে। তবে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, এই বিষয় স্পষ্ট না করলেও তৃণমূল বা সিপিএমে তিনি কোনওভাবেই যাবেন তা কিন্তু একপ্রকার নিশ্চিত। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
অভিজিৎবাবু তাঁর এজলাসে অসংখ্য কেসগুলির মাধ্যমে একটা জিনিস দেখেছেন বহু সংখ্যক সাধারণ মানুষ বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তিনি সেই অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চান । কিন্তু বিচারপতি হিসেবে সেই বহু সংখ্যক মানুষের পাশে থাকা সম্ভব হচ্ছে নয়। তাই তিনি রাজনীতির ময়দানে যেতে চান, এমন কথা অনেক সময় তিনি প্রকাশ্য বলে ফেলেছেন।
আর এটাকেই কাজে লাগাতে তৎপর কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। একাংশের মতে, বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রার্থী হতে পারেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকে। যে কেন্দ্রের সাংসদ এখন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। তাঁকে সরিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। তবে, অন্য একটি অংশের মতে, আপাতত এই ধারণায় থিতু হলেও অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে সামনে রেখেই বিধানসভা ভোটে যেতে পারে বিজেপি।
কতকটা একই রকমের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে যে জল্পনা চলছে, তারইমধ্যে বাবুল বলেন, ‘আমার একটা ভবিষ্যদ্বাণী (করা থাকল)। আমি বলে দিচ্ছি আপনাদের। সূর্য সেনের মূর্তির পাদদেশে উনি ইন্টারভিউ দেবেন। এত গরমে সূর্য সেনের মূর্তির পাদদেশে কেন? উনি নিজেকে আয়নার মধ্যে অন্য একটা জায়গায় দেখছেন। কিন্তু আজ ওঁনার স্বরূপটা প্রকাশ পেয়ে গেল। উনি শুধু যে ভোটে দাঁড়াবেন, সেটা নয়। উনি স্বপ্ন দেখছেন যে……। দেখবেন উনি হয়ত লোকসভা ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। ওঁনার মূল লক্ষ্য এটাই হবে যে উনি মুখ্যমন্ত্রী হবেন। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মুখ হবেন। আমি আপনাদের আজই বলে দিচ্ছি।’
সবমিলিয়ে এখন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক কোন পথে যায়, সেটা সময়ই বলে দিতে পারে!
Be First to Comment