জিতেন্দ্র তিওয়ারি, ভি শিবদাসন। প্রতীকী ছবি
নিজস্ব সংবাদদাতা, আসানসোল: বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের পরে এ বার আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি। রবিবার দুপুরে আসানসোলের জিটি রোডের গোধুলি মোড় সংলগ্ন এলাকায় নিজের আবাসিক অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রে শত্রুঘ্ন সিনহাকে আবার তৃণমূলের প্রার্থী করার প্রসঙ্গে আক্রমণ করলেন এই বিজেপি নেতা। তাঁকে এই নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে জবাব দিয়েছেন তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু।
আসানসোলের বর্তমান সাংসদকে আক্রমণ করার স্বপক্ষে তারই করা সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি শত্রুঘ্ন সিনহা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (আগের টুইটার) একটি পোস্ট করেছিলেন। যাতে তিনি বলেছিলেন, এখন দেশে দুজন এমন আছেন, যারা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি বড় আন্দোলন বা বড় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন। তারা হলেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল বা আরজেডির তেজস্বী যাদব। জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি, যখন এই পোস্ট করেছিলেন, তখন শত্রুঘ্ন সিনহা কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে হাত মেলাতে চেয়েছিলেন। এর কারণ হল তিনি বিহার থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। কংগ্রেস এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতাদের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু বিহারে রাজ্য সরকারের পালাবদল হওয়া ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিজেপির সাহায্য নিতেই তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে বিহার থেকে জেতা তার পক্ষে কঠিন হবে। তাই তিনি আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্রয়ে আসেন ও তার প্রশংসা করেন।
শত্রুঘ্ন সিনহা তার পোস্টে ভারতের তরুণ নেতাদের মধ্যে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নাম নেননি। অথচ তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। কিন্তু এখন তিনি আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশংসা করছেন।এর সঙ্গে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, শত্রুঘ্ন সিনহা গত দুই বছরে আসানসোল নিয়ে একটিও প্রশ্ন সংসদে করেননি। অথচ তিনি দেশ-বিদেশের নানা জায়গার মানুষ ও তাদের সমস্যার কথা বলেন। আসল কথা হল আসানসোলের সাংসদ হলেও, তার কাছে নিজের কেন্দ্রের জন্য কথা বলা ও কাজ করার জন্য সময় নেই। তিনি বিহারের একটি আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারলেন যে সেখান থেকে জেতা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। আবারও তিনি আসানসোলের জন্য সময় দেওয়া শুরু করলেন। তার কাছে, আসানসোলের কোন অগ্রাধিকার নেই। তাহলে আসানসোলের মানুষেরা তাকে কেন অগ্রাধিকার দেবে। আসানসোলের মানুষকে ভোট দেওয়ার আগে এই বিষয়গুলি মনে রাখার অনুরোধ করছি।
তিনি এও বলেন, শত্রুঘ্ন সিনহাকে আবার আসানসোল থেকে প্রার্থী করার পেছনে আসল গল্প হল আসানসোলে শাসক দলের মধ্যে দলাদলি ও কোন্দল। সেটা এতটাই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার আসানসোল থেকে একজন বহিরাগতকে প্রার্থী করছেন। এই প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র তেওয়ারি তার বর্তমান দলের প্রাক্তন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও পুরনো দলের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র উদাহরণ টানেন। তিনি বলেন, বাবুল সুপ্রিয় আসানসোলের সাংসদ হয়ে এখানে একটি স্থায়ী বাসস্থান নিয়েছিলেন ও ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আর ২ বছর হয়ে গেলেও আজ অবধি শত্রুঘ্ন সিনহা এমন কিছু করেননি। কারণ তিনি আসানসোলেরই নন।
এর জবাবে তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু বলেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের রাজ্য ছেড়ে দিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে লোকসভার প্রার্থী হয়েছেন। তার কি উত্তরপ্রদেশে নিজের কেন্দ্রে বাড়ি আছে? তিনি কি সেখানকার ভোটার? জিতেন্দ্র তেওয়ারি এইসব কিছু কি জানেন? আমি বিজেপির এখন এমন ১৮৫ জন সাংসদ আছেন, যাঁরা নিজের রাজ্য থেকে নির্বাচনে লড়াই করেননি। তাই বলছি, আগে নিজের ঘর দেখুন। পরে, অন্যের ঘর দেখবেন।”
দাসু বলেন, আসল কথা হল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শত্রুঘ্ন সিনহার নাম ঘোষণা করে দেওয়ায় আসানসোলের বিজেপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা এখন কি করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। আর শত্রুঘ্ন সিনহার পোস্ট করা নিয়ে দাসুর জবাব, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বাংলার যুবসমাজের আইকন। কে কী পোস্ট করল, তা নিয়ে বিচার হয় না।
Be First to Comment