আটটি সাক্ষাৎকার এবং আটটি প্রবন্ধের সমষ্টিতে তৈরি এই বই যেন অন্ধকার সময়ের আয়না। লিখলেন ধীমান ব্রহ্মচারী
প্রথম পর্ব
বিলকিস বানো! – “কোণে বসা সে দেহের নাম বিলকিস বানো। আলো-আঁধারিতে বসে সে স্বামী ইয়াকুবকে কোনোমতে শ্বাস নিতে নিতে বলে চলে সে-রাতের কথা। যে-রাতের কথা এই নির্লজ্জ, অপদার্থ, ভিতু, অসহায়, গা বাঁচানো, ভণ্ড, ছদ্মসাহসী আমরা, চিবিয়ে, চেটে, চুষে, গিলে, কামড়ে খেয়েছি, পড়েছি, শুনেছি এই এত বছর ধরে, না, ভুল হল।”– লাইন গুলো পড়তে পড়তে আপনার মনে হবে নিছকই একটা মেলোড্রামা চলছে আর আপনি আপনার সবকিছুকে নস্যাৎ করে দ্বিবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে স্লিম একটা ওনিডা কোম্পানির কালার টিভিতে বসে একটা সিনেমা দেখছেন। আসলে আমরা বার বার অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের স্বর হারিয়ে গেছে, আমাদের চেতনায় পান্না গেছে কালো হয়ে,তাই খোস মেজাজে কফি মগে চুমুক দিচ্ছি আর ঝড় তুলছি বিপ্লবের – অথবা – “হয়তো আমি আজীবন ভুল করেছি, এ পৃথিবীকে বুঝতে। তল পাইনি হয়তো প্রেমের, যন্ত্রণার, জীবনের, মৃত্যুর। সত্যি বলতে কোনো তাড়া বা আর্জেন্সি ছিল না কিন্তু, তবুও কেন যে আমি সর্বক্ষণ দৌড়ে মরলাম…ডেস্পারেটভাবে, জীবনের এক নতুন অধ্যায় আরম্ভ করতে প্রত্যাশী… কিন্তু কিছু মানুষের কাছে জীবনখানিই যে মস্ত অভিশাপ। এ জন্ম আমার সূচনাকাল থেকেই এক মারাত্মক দুর্ঘটনা যেন। শৈশবের ভয়াবহ একাকিত্ব থেকে আমার কখনো রেহাই নেই। যেন পূর্বকালের এক অবাঞ্ছিত শিশু।”- মনে পড়ে? রোহিত ভেমুলা? হ্যাঁ ঠিক। মনেপরে, একটা জ্বলন্ত আগুনের আঁচ যা একদিন এক বারুদের মতো বিস্ফোরক হতেই পারত।

অসাধারণ সব সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর লক্ষ্য রেখে লেখক অনির্বাণ ভট্টাচার্য একটি বই তৈরি করেছেন। যার নাম ষোলোকলাম। আটটি সাক্ষাৎকার এবং আটটি প্রবন্ধের সমষ্টিতে তৈরি হয়েছে এই বই। সমসাময়িক বিশেষ কয়েকটি ঘটনা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ধর্মের চাদরে ঢেকে দেওয়া এক উপত্যকার উল্লাস, সমকালীন সিনেমা এবং ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বিশেষ কিছু কথাবার্তা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং সোজা নিজের একটা স্ট্যান্ডপয়েন্ট পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া — সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি বই।
ভূমিকায় তিনি বলছেন,- “আশপাশের পরিস্থিতি যে প্রায় কখনওই থিতু হতে দেয় না, বলাই বাহুল্য। তাই প্রাণে জাগে রাগ, জিভে তিক্ত ভাব। বয়স এখনও যে চৌহদ্দিতে আছে, হাত উঠে যায়, পাথর খুঁজে। মনে হয়, দিই দুমড়ে এক ধারসে। কিন্তু তখনই এত দিনের ‘শিক্ষা’ রেগুলেটর ঘুরিয়ে বলে, সামলাও, আগে বসে পড়ো, ভেবে দেখো, এমন করতে আছে কি? নেই। তাই রাগকে অন্য ভাবে চ্যানেলাইজ করো। তা ছাড়া, হাতেও সদ্য বাত ধরেছে না? অতঃপর, ‘সভ্য’ হয়ে যাই। পরিচিত ছায়াপথে দীর্ঘ ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়াই। বা বলা ভালো, অনুসরণ করে বেড়াই অন্ধযুগকে। কিন্তু ভিতর তো তবুও গুলোয়। কারণ আমি ভীতু হলেও এখনও অসৎ হতে পারিনি। এই সব লেখা, সেই ভীতি কাটিয়ে উঠতে প্রয়াসী। নিজেকে সৎ রূপে জাগিয়ে রাখতেও প্রত্যয়ী।”
– একজন লেখকের পক্ষে এর থেকে বেশি আর কী আশা করা যায়? সার্বিক একটা পরিস্থিতিতে আছেন,প্রতি মুহূর্তে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছেন, এই অসময়ের দূর্যোগকে। আসলে আমরা যে স্বাধীনতার কথা বার বার বলি,সেই প্রিয় সুখ থেকে পদে পদে বঞ্চিত হয়েছে এই সময়ের মানুষ থেকে পশু পাখি। কিন্তু তবুও এই সব কিছু মানিয়ে নিয়ে মুখ টিপে মুচকি হাসি দিয়ে সম্ভাষণ পেশ করতেই আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আর সময়ের ফাঁকে ফাঁকে ধর্মাচরণের জন্য আমরা তর্জনী তুলছি ঈশ্বরকে। আসলে আমার শুধরোব না। কিছুতেই না। কারণ আমার এলিট ক্লাসের প্রথম সারির মানুষ হয়ে গেছে, কথায় কথায় আমার according to IPC কথার ভাবি উচ্চারণ করব না বিপরীতে আমরা বেছে নিয়েছি একটা ‘ মার্জিত ইতরপনা ‘ এবং ‘অপার নিষ্ক্রিয়তা ‘। আবার আরও একটি প্রবন্ধ, ‘ হিন্দুত্ববাদীরা আদৌ জানেন সনাতন ধর্মের ইতিবৃত্ত?’- এখানে তিনি খুব স্পষ্টভাবে একটি কৌশল আমাদের দেখিয়েছেন, ‘ কেন্দ্রে বর্তমান শাসক বিগত ন-বছর ধরে তো বিশেষ করে, তারও আগে সন্তর্পণে ইতিহাস ও মিথকে শুধু গুলিয়েই দেয়নি, মিথকে প্রাতিষ্ঠানিক মান্যতাও দিয়েছে। এমনই এক প্রায় ‘সত্যে’ পরিণত মিথ হিন্দুধর্মের মোনোলিথিক বা একক চরিত্র। যা নাকি এমন এক মহানদী, যাতে কখনো কোনোরকম অন্য ধারা এসে মেশেনি। তার উৎস আছে আর আছে আদি অনন্ত। ‘ — খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই তিনি আলোচনা করেছেন আজকের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা! এক থেকে বহুত্বকে বেমালুম তুলে দিয়ে একত্ব লড়াইয়ের যে বিরাট একটি ফন্দি এবং যেখানে শুধুমাত্র ধর্মের আস্ফালনকে ভিত্তি করেই, এক ভারত, এক জাতি, এক দেশ ‘– এই অদৃশ্য যে স্বর মানুষের মধ্যে মানুষের বিভেদকে করছে আরও শক্তিশালী। আজ কত রাম-বারণের যুদ্ধ বাঁধছে এলাকায়। সোর্ড হাতে রামনবমী দেখছে বাংলার মানুষ। যেখানে কতটা রাজনৈতিক সরলীকরণ হয়েছে রাজ্য থেকে রাষ্ট্রের সে প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে অন্তরায়। আসলে রামমন্দির স্থাপন বা বল্লভভাই প্যাটলের বিরাট মূর্তি স্থাপনই কি আমাদের হিন্দুত্বের পিলারে ইট গাথনির শুরু নয়? এখন প্রশ্ন একটাই এভাবে কতদিন? তাই কিছু মূল প্রশ্নের কথা তিনি বলেছেন, – ‘ এ হেন সনাতন- ভাবনা হাত খুলে দেখাই যেত না যদি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে আর্যসমাজের মতো প্রতিষ্ঠান হিন্দুধর্মকে সংস্কার করার লক্ষ্যে তেড়েফেঁড়ে না উঠত আর কাউন্টার হিসেবে সংস্কারবিরোধীরা সনাতনী ঝাণ্ডা তুলে মাঠে না নামত।’
এইরকম ‘ অব র্যাপ দে তু মোহে গেরুয়া – হিন্দুত্ববাদী র্যাপের জগৎ’,’ মুছে দিয়ে পোস্ট – মেমারি, মিথ ও মিথ্যাই হল ইতিহাস!’ এছাড়াও আরও একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা পুরুলিয়াবাসী এক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ব্যক্তি নাম, পরমেশ্বর। পরমেশ্বর বাবুকে দেখেছেন তিনি। তাঁকে দেখে তিনি বলছেন ,- থাকার জায়গার অভাব হত না নিশ্চয়ই পরমেশ্বরবাবুর, কারণ আশপাশের সব্বাইয়ের কাছে এখনও তিনি বাড়ির ছেলে। ঠিক সেই পুরোনো দিনের মতো। যখন পরমেশ্বর ফুটবল খেলছেন চুটিয়ে, বাঁশি বাজাচ্ছেন হাওয়ায় হাওয়ায়, ছৌ নাচার ফাঁকে ফাঁকে সাধের ‘ক্যাসিয়া’ নিয়ে অন্যের মহড়ায় সুর জোগাচ্ছেন, মোটকথা তিরতির করে উড়ছেন। তখন তো আসলে পরমেশ্বরকে ছাড়া গ্রামে কোনো কিছুই হবে না। তারপর ওই দিন যে কী মাথার হল ছাই… সবটা তছনছ হয়ে গেল।’ পরমেশ্বর বাবু খুন করেছেন – ‘ এই ঘটনাটা ঘটার পর পরমেশ্বরবাবুও ঘরে ফিরেছিলেন, কোথাও পালিয়ে যাননি, এবং ফিরে এসে বলেছিলেন, খুন করেছি। আমি খুন করে এসেছি। এই হয়েছে, আমি বুঝতে পারিনি, কী করব, মাথা খারাপ হয়ে গেল, তাই আমি খুন করেছি। মায়ের ওপর বেজায় চোটপাট করলেন কয়েকক্ষণ। কারণ মা-ই তো বলে পাঠিয়েছিল, যা ডেকেছে, বলছে খাওয়াবে। কিন্তু সত্যি মা-ই বা কেমন করে বুঝবেন, তলে তলে এমন জিনিস ছিল। যাক গে এখন তো কান্নাকাটির সময় নয়, এক্ষুনি কিছু একটা করতে হবে। কী যে করা, কিছুই মাথায় আসছিল না। ওরা কি এতক্ষণে পুলিশকে বলে দিয়েছে? গ্রামের বাকিদের ডেকে কথা বলবে, না কি, মাথায় ঢুকছে না। রাতের খাওয়া সামনে ছড়িয়ে, কেউ ওদিকে ঘুরে তাকাচ্ছেও না। সব্বাই কুঁড়েঘরের যেটুকু দেয়ালই হোক, সেদিকে চেয়ে চুপ করে বসেছিল।’ এ যেন একটা বিরাট যুদ্ধপর্ব। তারপর শান্তিপর্বের সূচনা। আসলে যে নিস্তেজ থেকে জীবন নিয়ে চলতে পারে পাহাড় আর সমতলে। আবার কোথাও ঘন জঙ্গলের মধ্যে নিজের স্পর্শ অনুভব করতে পারে,সেই মন মাতানো আত্মহারা পাগল সুর একসময় বেসুরে বাজতে থাকে। ১৯৯২ সালের সেই রাত। যখন সূর্য অযোধ্যা পাহাড়ের গায়ে ঢোলে পড়েছে। ঘটনার পর ঘটনা। শেষে ভুট্টোকে কুঠার দিয়ে কোপ। রক্তের স্রোত তখন সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অসাধারণ সব প্রবন্ধ দিয়ে বইটির প্রবন্ধ বিভাগ সাজানো হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্ব
এই পর্বে মূলত আটটি সাক্ষাৎকার সংগ্রহ রয়েছে। যেমন – চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপচারিতা, সুধীর মিশ্র’র সঙ্গে আলাপচারিতা, শান্তনু মৈত্র’র সঙ্গে আলাপচারিতা, রজতকান্ত রায়ের সঙ্গে কথা, প্রসঙ্গ নেহরু বনাম সুভাষ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপচারিতা,ইতিহাসবিদ রোজি লিওয়েলিন জোন্স-এর সাক্ষাৎকার, দেবজ্যোতি মিশ্রর সঙ্গে আলাপচারিতা, প্রসঙ্গ রবিশঙ্কর ,পিকে ব্যানার্জির সঙ্গে আড্ডা – প্রভৃতি বেশ কিছু কথা ও আলোচনা আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে ‘সুধীর মিশ্র’র সঙ্গে আলাপচারিতা শীর্ষক সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্ন –
• আচ্ছা! কিন্তু এই যে বার বার বলছেন মধ্যবিত্ত এখন আর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ নিয়ে মাথা ঘামায় না, তো আন্না হাজারের সঙ্গে যে বিরাট সংখ্যক লোক আমরা দেখেছি, সেখানে তো প্রচুর পরিমাণে মধ্যবিত্ত দেখা গিয়েছিল।
• আরে অর্থবহ কিছু একটা তো হতে হবে, নাকি? শুধু থাকলেই হল? রাগ রয়েছে, অবশ্যই রয়েছে। সিনিসিজমও রয়েছে। রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, যারা পাঁড় সুবিধেবাদী, নিজেরটাই গুছিয়ে নিতে চায় যারা। যারা চোখের নিমেষে সংসদীয় গণতন্ত্র ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে জমা রাগ তো থাকবেই, স্বাভাবিক। কিন্তু আমি তো এদের মধ্যে আগে দেখতে পাই, একটা উগ্র দেশপ্রেম, সাম্প্রদায়িক একপ্রকার চোরাস্রোত, যা মারাত্মক, এবং এরা তো মনে হয় সাংঘাতিক রকম নীতিবাগীশও। ওই যে নাকউঁচু বিশুদ্ধতাবাদী সব হয় না, সেরকম। হইহল্লা করেছে প্রচুর, কিন্তু শেষ অবধি হচ্ছে কী? দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ভালো, তো সে আর নতুন কী? জেপি-র আন্দোলন তো এর চেয়ে আরও ব্যাপক ছিল। শুধু প্রতিবাদ করলে হয় না। ভিন্ন এক পথ বের করতে হয়। তা করার দিকে কি ওরা গিয়েছে? যায়নি। অতএব ওরা আমার কাছে নম্বর পাবে না।
সমকালীন সময়ে কতটা প্রাসঙ্গিক এই আলোচনা। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একটা বিরাট অংশ আজকের দিনে সুবিধাভোগী,সেখানে কোনরকম আর্গুমেন্ট চলবে না,যদিও চলে সেটা রাজনীতি প্রভাবিত। তাই আমাদের মতো শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত চিন্তা কোনভাবেই সুদূরপ্রসারী হবে না,হতে পারে না। এছাড়াও ইতিহাসবিদ রোজি লিওয়েলিন জোন্স-এর সাক্ষাৎকার এ প্রশ্ন করেছেন –
• আমাদের এদেশে ইতিহাস যেভাবে লেখা হয়েছে, এবং বিশেষত এ-কালে যেভাবে লেখা হয়ে থাকে, তা সম্পর্কে আপনার কী বক্তব্য? স্পষ্টতই যে ভাবে, অর্থাৎ যে দৃষ্টিকোণ থেকে এই ১৮৫৭-র ইতিহাস লেখা হয়েছে, তা তো এই ঘটনার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অনেক ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।
• এখন এক্ষেত্রে আমি বলব, আপনি কোন পক্ষে তা দেখতে হবে। ভারতীয় এক লেখকের কথা বলতে পারি, দারোগা আব্বাস আলি, তিনি কিন্তু লখনউতে ‘মিউটিনি’ সাইটের ছবি, যাকে বলে দরাজ হস্তে ছাপিয়েছিলেন, এবং সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন, অ্যান্ড দিস ইজ ইম্পর্ট্যান্ট, সাহসী ব্রিটিশদের অবারিত বন্দনা। তিনি কিন্তু এদেশেই ঘটে যাওয়া এক ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন এইভাবে। আবার এখন কর্তার লালভানির মতোও মানুষ আপনি পাবেন, যাঁরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ব্রিটিশের ব্যবহার অত্যন্ত যুক্তিসংগত ছিল, এবং ভারতীয়রা ঠিক তা-ই পেয়েছিল, যা তাদের উচিত। গত বছরের শেষে প্রকাশিত আমার সম্পাদিত ‘দ্য আপরাইজিং অফ ১৮৫৭- দ্য আলকাজি কালেকশন অফ ফোটোগ্রাফি’-তে বেশ কিছু প্রথিতযশা ভারতীয় ইতিহাসবিদদের লেখা আমি পেয়েছি, যাঁদের লেখার টোন হয় প্রো-ইন্ডিয়ান, বা নিউট্রাল। এবং তাঁরা সকলেই কিন্তু এই ঘটনাবলিকে নিরপেক্ষ এক দৃষ্টিকোণ দিয়েই দেখছেন। এইভাবেই তো ইতিহাস বা বিগত সময়কে দেখতে হবে। আমি ভীষণভাবেই ‘রেট্রো-লিবারালিজম’-এর বিরুদ্ধে, অর্থাৎ সেই প্রবণতা যেখানে পূর্বকালের উপর বর্তমান কালের ধ্যানধারণা, নীতি ইত্যাদি চাপিয়ে, তাকে পড়ার একরকম চেষ্টা হয়। এ আবার হয় না কি? এ কালে আমি যে ভাবনাপ্রবাহ নিয়ে ডিল করব, তা তো হতেই পারে পূর্বকালে ছিলই না, তা হলে আমি কী করে, আজকের আয়নায়, গতকালকে মাপব!’ গতানুগতিকতার বিপরীতে হাঁটা যেকোন সৃজনশীল ও বিদ্বান ব্যক্তির একমাত্র পাথেয়। সেই পথের ধারায় হাঁটেন ইতিহাসবিদ রোজি লিওয়েলিন জোন্স। অসাধারণ যুক্তি এবং তাঁর সম্যকদৃষ্টি কোণ থেকে সামগ্রিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তিনি বলে বোঝালেন। এই ধরনের প্রায় আটটি মূল্যবান সাক্ষাৎকার নিয়ে বইটি তৈরি।
ষোলোকলাম – অনির্বাণ ভট্টাচার্য / মূল্য -২৭৫.০০/ এবং অধ্যায় প্রকাশনা




Be First to Comment