Press "Enter" to skip to content

গীতাঞ্জলির রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ যে অরূপের সন্ধান করেছিলেন, যে মুক্তি চেখে দেখতে চেয়েছিলেন তার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ হয়ত বা এই গীতাঞ্জলি। যেখানে একটি সৃজনের ভিতর বাহির মিলেমিশে মহা সঙ্গম। লিখলেন তাপস রায়

ছিন্নপত্রের ১৪৮ অংশে লিখছেন রবীন্দ্রনাথ, “ আমরা বাইরের শাস্ত্র থেকে যে ধর্ম পাই সে কখনোই আমার ধর্ম হয়ে ওঠে না। তার সঙ্গে কেবলমাত্র একটা অভ্যাসের যোগ জন্মে। ধর্মকে নিজের মধ্যে উদ্ভূত করে তোলাই মানুষের চিরজীবনের সাধনা। চরম বেদনায় তাকে জন্মদান করতে হয়,নাড়ির শোণিত দিয়ে তাকে প্রাণ দান করতে হয়, তারপরে জীবনের সুখ পাই আর না পাই — আনন্দে চরিতার্থ হয়ে মরতে পারি। যা মুখে বলছি, যা লোকের মুখে শুনে প্রত্যহ আবৃত্তি করছি তা যে আমার পক্ষে কতই মিথ্যা তা আমরা বুঝতেই পারি নে। এদিকে আমাদের জীবন ভিতরে ভিতরে নিজের সত্যের মন্দির প্রতিদিন একটি একটি ইট নিয়ে গড়ে তুলছে। জীবনের সমস্ত সুখদুঃখকে যখন বিচ্ছিন্ন ক্ষণিকভাবে দেখি তখন আমাদের ভিতরকার এই অনন্ত সৃজন রহস্য ঠিক বুঝতে পারি নে — প্রত্যেক পদটা বানান করে পড়তে হলে যেমন সমস্ত বাক্যটার অর্থ এবং ভাবের ঐক্য বোঝা যায় না সেইরকম। কিন্তু নিজের ভিতরকার এই সৃজনব্যাপারের অখন্ড ঐক্যসূত্র যখন একবার অনুভব করা যায় তখন এই সর্জ্যমান অনন্ত বিশ্ব চরাচরের সঙ্গে নিজের যোগ উপলব্ধি করি। ”

ছিন্নপত্রের এই চিঠিটির আলোতেই যেন গীতাঞ্জলির ৯৪ সংখ্যার গানটি গাঁথা হল। ‘ বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহার,/ সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারো।/ নয়কো বনে, নয় বিজনে,/ নয়কো আমার আপন মনে ,/ সবার যেথায় আপন তুমি হে প্রিয়,/ সেথায় আপন আমারো।’ রবীন্দ্রনাথের এই অন্তর্দেবতার সন্ধানটিই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে যুদ্ধ-ক্ষুব্ধ অশান্ত ইউরোপকে। পণ্ডিত জহরলাল নেহরুর আবেগী ব্যক্তিত্বও যে ভেসে গেল সেই স্রোতে — “ I wish to pay my deep homage to one who has been as a beacon light to all of us, ever pointing to the finer and nobler aspects of life and never allowing us to fall into the rust which kill individuals as well as nations. … Rabindranath Tagore has given to our nationalism the outlook of internationalism and has enriched it with art and music and magic of his words, so that it has become the full-blooded emblem of India’s awakened spirit.”

রবীন্দ্রনাথ যে অরূপের সন্ধান করেছিলেন, যে মুক্তি চেখে দেখতে চেয়েছিলেন তার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ হয়ত বা এই গীতাঞ্জলি। যেখানে একটি সৃজনের ভিতর বাহির মিলেমিশে মহা সঙ্গম। কবিতার নিটোল শিশির মুক্তো ঝলক গানের সুতোয় বেঁধে ঝুলিয়ে দিলেন বঙ্গলক্ষ্মীর গলায়। খাদহীন ভারত আত্মার পূর্ণ প্রকাশ যেন এইখানে। এই বিশুদ্ধ সৌন্দর্য ক্রমে কবির কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইবে হয়ত বাইরের নানাবিধ প্ররোচনায়। এই অকলুষ ভাবময় জ্যোতির্ময়তার দিকে চেয়ে থাকা তাঁর নিবিড় আশ্লেষ তাঁকে বেদনার্ত করে রাখবে এবং ‘শরৎ প্রাতের আলোর বাণী’ তাঁর ধ্যেয় বলেই হয়ত গানে গানে সব কলুষ কাটিয়ে নেবার দিকে তাঁর অনন্ত যাত্রা সমাপ্ত হবে না।

গীতাঞ্জলির ৮৫টি কবিতাতে রবীন্দ্রনাথ সুর দিয়েছেন। এই সুর তাঁর আত্মার অনাহত উন্মোচন। রবীন্দ্র আত্মার বীজক হিসেবে ফলে গীতাঞ্জলিকে ভাবা যেতে পারে। নানাপথে নানাপ্রকারে তিনি মুক্তি অন্বেষণ করেছেন, কিন্তু ফিরে ফিরে এসেছেন এই এখানেই। যেখানে কবিতা সুরের হাত ধরে বেরিয়ে গেছে চার দেয়ালের বাইরে কোনো এক অনিকেত পবিত্রতায়। ছিন্নপত্রের ৩৬ সংখ্যায় তাই তো বলা আছে — “ একদিন রাত্তির প্রায় দুটোর সময় ঘুম ভেঙে যেতেই বোটের জানালাটা তুলে ধরে মুখ বাড়িয়ে দেখলুম নিস্তরঙ্গ নদীর উপরে ফুট্‌ফুটে জ্যোৎস্না হয়েছে, একটা ছোট্ট ডিঙিতে একজন ছোকরা একলা দাঁড় বেয়ে চলেছে,এমনি মিষ্টি গলায় গান ধরেছে — গান তার পূর্বে তেমন মিষ্টি কখনো শুনি নি। হঠাৎ মনে হল, আবার যদি জীবনটা সেই দিন থেকে ফিরে পাই! আর একবার পরীক্ষা করে দেখা যায়; এবার তাকে আর শুষ্ক, অপরিতৃপ্ত করে ফেলে রেখে দিই নে — কবির গান গলায় নিয়ে একটা ছিপছিপে ডিঙিতে জোয়ারের বেলায় পৃথিবীতে ভেসে পড়ি, গান গাই এবং বশ করি …।”

গীতাঞ্জলির বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “ এই গ্রন্থের প্রথম কয়েকটি গান পূর্বে অন্য দুই-একটি পুস্তকে প্রকাশিত হইয়াছে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে যে-সমস্ত গান পরে পরে রচিত হইয়াছে তাহাদের পরস্পরের মধ্যে একটি ভাবের ঐক্য থাকা সম্ভবপর মনে করিয়া, তাহাদের সকলগুলিই এই পুস্তকে একত্রে বাহির করা হইল।”

কী সেই ভাবগত ঐক্য যা প্রেম, পূজা, প্রকৃতি, স্বদেশ — সব একসঙ্গে গ্রথিত করে! এই খোঁজায় প্রতিনিয়তই জীবনদেবতার কথা প্রকাশ পাবে। কিন্তু কে সেই জীবনদেবতা যিনি বিধাতার বাম দিকে বসে আছেন! বাম দিকে বসে আছেন বলে ভাবা যেতে পারে তিনিই সৃষ্টি-প্রেরণা। কে তিনি! তাকে কি আমরা মানুষের অমল সুষমার কাছাকাছি একটি উদার প্রকৃতি হিসেবে ভেবে নেব, যেখানে প্রেম-বিরহে দিব্য প্রেরণা উৎসারিত! যেখানে প্রাণের আনন্দে খেলা চলে, আর সরলতা ঝরে পড়ে চারদিক থেকে টুপটাপ! তাঁকেই কি কবি বললেন, “ তুমি ভোরের বেলা ডাক দিয়েছ কত/ যেন আমার আপন সখার মতো,/ হেসে তোমার সাথে ফিরেছিলেম ছুটে/ সেদিন কত-না বন-বনান্ত।” ( গীতাঞ্জলি ৬৮ সংখ্যা)। এই কবিতায় স্পষ্টই একটি বালক তার সারল্যকে সঙ্গে করে ছুটোছুটি করছে। আর জীবনদেবতাও তার সাথী। এই বালক-মন যেমন কবি রাখতে চেয়েছেন, তেমনি সারাজীবন জীবনদেবতাকেও পাশে পেতে চেয়েছেন।

‘আত্মপরিচয়’-এর সম্মান প্রবন্ধটিতে বলছিলেন, চন্দননগরে তাঁর আসার স্মৃতি সহ প্রকৃতির প্রথম আহবান ধ্বনি তিনি শুনলেন। সেখানে তিনি বললেন, “ সেদিন যে বালক জীবনের ঊষালোকে আপনাকে স্পষ্ট করে চেনে নি এবং চেনে নি এই সংসারকে, তার উপরে একে একে অন্তত পঞ্চাশ বছরের চাপ পড়েছে। এই চাপে সেই বালক সম্পূর্ণ লোপ পায় নি। আমি আজ নানা কাজে হাত দিয়েছি, এবং নানা দেশের কাছ থেকে খ্যাতি অর্জন করেছি। কিন্তু অন্তরের মধ্যে সেই বালক এখনো আছে কাঁচা — সংসারের যে হাটে সব জিনিসের দর যাচাই হয় সেখানকার রাস্তাঘাটে ও চালচলনে সে পাকা হয় নি, প্রকৃতির খেলার প্রাঙ্গনটার দিকে এখনো তার টান — তা ছাড়া খ্যাতির মধ্যে সে আপনার খাঁটি পরিচয় পায় না। খ্যাতির মতো বন্ধন নেই, দেশের মুখের কথার জাল থেকে মনকে সম্পূর্ণ ছাড়িয়ে রাখা শক্ত। বালকের মনের যে ডানা সেদিন আকাশে ছাড়া পেয়েছিল তার সঙ্গে খ্যাতির দড়ি বাঁধা ছিল না। আজও সেদিনকার সেই খ্যাতিহীন মুক্তির আকাশের জন্য তার মন ব্যাকুল হয়।”

এই অহংহীন মুক্ত একটি মনের অনাড়ম্বর প্রকাশকে বক্ষমান করেই যেন রচিত হয়েছিল গীতাঞ্জলির প্রথম কবিতাটি। কবিতা না কি স্তোত্র! —- “ আমারে না যেন করি প্রচার/ আমার আপন কাজে;/ তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ/ আমার জীবন মাঝে।”

বুদ্ধদেব বসুও এই জীবন দেবতাকে দেবতা হিসেবে মানেন নি। বুদ্ধদেব বসু গীতাঞ্জলির কবিতা প্রসঙ্গে লিখেছেন, “ উপনিষদের ব্রহ্ম, গীতার পরমাত্মা, দান্তের চরম, জয়দেবের গোবিন্দ — এর কোনোটার সঙ্গেই রাবীন্দ্রিক ভগবানের সাদৃশ্য নেই। ” এর সমর্থনে আমরা এর আগেও ছিন্নপত্রের ১৪৮ সংখ্যাটিকে দেখেছি। যেখানে কবি বলছেন, “ অনন্ত জগৎপ্রাণের সঙ্গে আমার এই-যে চিরকালের নিগূঢ় সম্বন্ধ সেই সম্বন্ধেরই প্রত্যক্ষ্য ভাষা এই-সমস্ত বর্ণ গন্ধ গীত। চতুর্দিকে এই ভাষার অবিশ্রাম বিকাশ আমার মনকে লক্ষ্যে অলক্ষ্যে ক্রমাগতই আন্দোলিত করছে, কথাবার্তা দিনরাত্রই চলছে। এই যে আমার অন্তরের সঙ্গে বাহিরের কথাবার্তা আনাগোনা আদানপ্রদান— আমার যাকিছু পাওয়া সম্ভব তা কেবলমাত্র এর থেকেই পেতে পারি,…”। এখানে আমরা মিলিয়ে পড়ে নিতে পারি গীতাঞ্জলির ৬সংখ্যার কবিতা। “ প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকে / প্লাবিত করিয়া নিখিল দ্যুলোক ভূলোকে/ তোমার অমল অমৃত পড়িছে ঝরিয়া।/ দিকে দিকে আজি টুটিয়া সকল বন্ধ/ মুরতি ধরিয়া জাগিয়া উঠে আনন্দ;/ জীবন উঠিল নিবিড় সুধায় ভরিয়া।”

একটা গানের নিজের কোনো উদ্দ্যেশ্য থাকে না। শ্রোতার আনন্দ অভিব্যক্তিই শুধু তার প্রাপ্তি। রবীন্দ্রনাথ জেনেছেন, তাঁর সমস্ত জীবন, সৃষ্টি দিয়ে জেনেছেন। মৃত্যুকে দূরে সরিয়ে রেখে মেনেছেন এই আনন্দের স্বরূপটি। তাই তো তাঁর ‘জগৎ জুড়ে উদার সুরে আনন্দগান বাজে’। আবু সয়ীদ আইয়ুব গীতাঞ্জলির পংক্তি বিশুদ্ধ কবিতা বলে যে চৈতন্যের দিকে যেতে চেয়েছেন, তাতে মুগ্ধতা বাজলেও দোলাচলের নিরসন ঘটে না। তিনি বললেন, “ এর অধিকাংশ গান শুনে আমি মুগ্ধ হই, এমন-কি সুর বাদ দিয়ে শুধু কবিতা রূপে পাঠ করলেও আমার মন গভীরভাবে সাড়া দেয়। প্রেমের অভিজ্ঞতা আমার নেই এমন কথা বলব না। কিন্তু ঈশ্বর-বিষয়ক যে-কোনোপ্রকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে আমি বঞ্চিত। শব্দ প্রমাণ হিসেবে আমার কাছে একেবারে অগ্রাহ্য, শুধু অগ্রাহ্য নয়,অশ্রদ্ধেয়। এবং দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তার পথে-বিপথে যত এগিয়েছি,ঈশ্বরে বিশ্বাস ততই আমার ক্ষীণ হয়েছে; অবশেষে আজ প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তে পৌঁছে বাল্যকালের পরম আশ্রয়দাতা, পরম কল্যাণময়, অনন্ত শক্তিধর, সকল দুঃখতাপহর কোনো বিশ্ববিধানকর্তাকে তো আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ যে ব্যক্তি স্বরূপ ঈশ্বরকে গ্রহণ করতে আমার মনের প্রতিটি কক্ষে প্রবল প্রতিরোধ, সেই ঈশ্বরপ্রেমে আদ্যোপ্রান্ত অনুরঞ্জিত কাব্যকে হৃদয়ে স্থান দিতে একটুও বাঁধে না। কেন বাঁধে না, এ প্রশ্ন আমাকে তরুণ বয়স থেকে ভাবিয়েছে।”

গীতাঞ্জলি নিয়ে নানাভাবে তাত্ত্বিকেরা ভেবেছেন। কিন্তু কোনো এক মহত্ত্বর চৈতন্যের উদবোধন ছাড়া তেমন ধর্মীয় বিশেষ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি। যায়নি বা কবি হয়ত নিজেই ধরা দিতে চাননি। “ আমার একলা ঘরের আড়াল ভেঙে / বিশাল ভবে/ প্রাণের রথে বাহির হতে/ পারব কবে।” ( ৮৪ সংখ্যা।)

কীট্‌স বলেছিলেন, “ I want a brighter word than bright, a fairer word than fair.” এই রূপগত সৌন্দর্যের দিকে সব লিরিকই যেন ধাবিত হতে চায় গীতাঞ্জলি পর্বে। “ হেথা যে গান গাইতে আসা আমার/ হয় নি সে গান গাওয়া। / আজও কেবলি সুর সাধা, আমার/ কেবলি গাইতে চাওয়।/ আমার লাগে নাই সে সুর, আমার/ বাঁধে নাই সে কথা,/ শুধু প্রাণেরই মাঝখানে আছে/ গানের ব্যাকুলতা।” ( গীতাঞ্জলি, ৩৯ সংখ্যক কবিতা।) একটি গীতল কবিতার জন্য খুব বেশি করে দরকার ভাষার সংগীতের দিকটি, তার অর্থ, স্মৃতি, উক্তির সারল্য, অলংকারের প্রয়োগ, চিত্রকল্প, নাটকীয়তা, রং, আলো — কবি কামনা করেন, এসবই ঠিকঠাক লেগে যেন তাঁর অরূপ প্রতিমাটি তৈরি হয়। গীতাঞ্জলি পর্বে রবীন্দ্রনাথ খুব বেশি করেই ঝুঁকে ছিলেন সৌন্দর্যের দিকে। “ সুন্দর তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে / অরুণ বরণ পারিজাত লয়ে হাতে।/ নিদ্রিত পুরী, পথিক ছিল না পথে,/ একা চলি গেলে তোমার সোনার রথে,/ বারেক থামিয়া মোর বাতায়ন পানে/ চেয়েছিলে তব করুণ নয়নপাতে।/ সুন্দর, তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে।” (৬৭সংখ্যক কবিতা)।

রবীন্দ্রনাথের এই অরূপতার ধ্যাানকে কোনো মাপে ধরে ফেলা যাচ্ছে না। কে সেই সুন্দর, কে? বলা যাচ্ছে না কে তার অন্তরতম। কে সে যে তার হৃদয়ের আকুলতা ধারণ করে আছে! এ তো কোনো ভঙ্গি নয়। তাঁকে বলতে হয়েছে দেবতা রয়েছেন মাঠে-ঘাটে, যেখানে করছে চাষা চাষ। পোস্ট-এনলাইটেনমেন্টের কালে ধর্মের পুরনো আধার আর মান্য নয় সারা পৃথিবীতে। তো এই রোমান্টিক স্পিরিচুয়াল বোধটিকে মিস্টিসিজমের সর্বোত্তম প্রকাশ হিসেবে কি দেখা হবে!চৈতন্যের মিস্টিক অনুভূতি মানুষের কল্যাণবোধে আরো কিছুদূর এগিয়ে এসে হয়ত এই ‘ surplus of man’ এর আদল। যুক্তি সব সময় সেখানে পৌঁছবে না। অসীমের রহস্যে এই শূন্যতার আত্মানুভূতিতে মিস্টিকের পথরেখা প্রস্তুত হয়। অমন যুক্তিবাদী বার্টান্ড রাসেলও যে অনুভূতিকে অস্বীকার করতে না পেরে বলেছেন, ‘ I attribute inestimable value to mystic emotion — reveals a possibility of human nature, a possibility of nobler, happier, freer life.’

গীতাঞ্জলির ৩০ সংখ্যার কবিতায় ওই মিস্টিক ভক্তির অনুরণন। “ এই যে তোমার প্রেম, ওগো /হৃদয়হরণ।/ এই-যে পাতায় আলো নাচে/ সোনার বরণ।/ এই-যে মধুর আলস-ভরে / মেঘ ভেসে যায় আকাশ-’পরে / এই-যে বাতাস দেহে করে / অমৃত ক্ষরণ।/ এই তো তোমার প্রেম,ওগো/ হৃদয়হরণ।” বিদেশীদের মধ্যে ইংল্যন্ডের বিখ্যাত চিত্রকর উইলিয়াম রদেনসটাইনের প্রথম সুযোগ ঘটেছিল ইংরেজি অনুবাদে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির কবিতা পড়ার। তিনি এই কবিতাগুলিতে এক মহৎ মিস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। আর নিজেই সেসব টাইপ করিয়ে পাঠিয়ে দিলেন ইয়েট্‌সের কাছে।

ইয়েট্‌স উত্তেজিত। এই তো সেই স্বপ্নময় জগৎ যাকে তিনি তাঁর রোমান্টিকতায় খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এই তো সেই জাদুময় জগৎ যেখানে বিশ্বজগৎ ও মানুষ এক হয়ে আছে লীলার আনন্দে। দেহ ও আত্মা যেখানে আগুন ও জলের মতো মিলেমিশে একাকার। এই দুঃখময় জগৎ ভুলে থাকার জন্য ইয়েটস এই কবিতার দিকে তাকালেন। মানসিকতার জটিল অন্তর্দ্বন্দ্বে পীড়িত ইয়েটস গীতাঞ্জলিতে মুক্তি ও শান্তি খুঁজে পেলেন। সমগ্র মানুষ, সমগ্র সভ্যতা এই কবি-কল্পনায় ধরা পড়েছে। এই কল্পনা পাশ্চাত্যের কাছে অচেনা। যেন স্বপ্নের ভেতর থেকে কোনো কণ্ঠস্বর ভেসে এসেছে। ইয়েট্‌সের কাছে এ যেন নিজের আত্মার দর্শন। গীতাঞ্জলির কবিতায় বিশ্ব ও বিশ্বাতীতকে বিরোধহীন ভাবে দেখে তৃপ্ত হয়ে গেলেন তিনি। আবার যেহেতু আইরিশ ধর্মের সঙ্গে ভারতীয় উপনিষদের মিল আছে ইয়েট্‌স ভারতীয় বোধের সঙ্গে এসময় একাত্মতা অনুভব করতে পারলেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে তাঁর মনে হল, ‘ মাঝে মাঝে আমার বিস্ময় জাগে রবীন্দ্রনাথ কি বাংলার সাহিত্য থেকে এটি পেয়েছেন, না কি ধর্ম থেকে পেয়েছেন! আপ্লুত ইয়েট্‌সকে ফলে খুব দ্রুত রদেনস্টাইনের কাছে লিখতে হয়, “ My dear Rothenstein,I sent the text and book to Tagore yesterday, and I expect my essay ( Introduction to Gijanjali) back from my typist on monday. I think I had better send it to you. You will, I think , find it emphatic enough. If you like it you can say so when you send it on to Tagore. In that first little chapter I have given what Indians have said to me about Tagore — their praise of him and their description of his life.”

‘আমার এ গান ছেড়েছে তার সকল অলংকার’ — একথা লিখলেও গীতাঞ্জলির সামিপ্যে এই ভারতীয় মিস্টিসিজম সংশয়বাদী ইউরোপীয় মননকে ভাসিয়ে নিল। যেভাবে শ্রীচৈতন্য ভাসিয়ে দিয়েছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলার অন্ধতাকে। শুধু ইয়েট্‌স বা রদেনস্টাইন নন, ইংল্যন্ডের আর এক কবি টমাস স্টার্জ মূর রদেনস্টাইনের বাড়িতে গীতাঞ্জলির অনুবাদ শুনে মুগ্ধ। তিনি সুইডিস একাডেমির নোবেল কমিটির সচিবকে লিখলেন, “ Sir, as a fellow of the Royal Society of Literature of the United Kingdom, I have the honour to propose the name of Rabindranath Tagore as a person well qualified, in my opinion, to be awarded the Nobel Prize in Literature.” এরপর র‍্য়্যাল সোসাইটি অফ লিটারেচারের সরকারি প্রার্থী টমাস হার্ডিকে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথের নামই বিবেচিত হল পুরস্কার ঘোষণায়।

সন্দিগ্ধ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। অনুবাদের ভেতর সৃষ্টি ও স্রষ্টার যে অধঃপাত তা তাঁকে নিশ্চিত বিড়ম্বিত রেখেছে বহুদিন, বিশেষতঃ তিনি নিজে যতদিন নিজের শিল্পকে ইংরেজ মূর্তির ছাঁচে ঢালতে গিয়েছেন। তাঁর ওই দ্বিধা-মানস বলেছে, “ আমার রচনালক্ষ্মীকে তুমি জগৎ সমক্ষে বাহির করিতে উদ্যত হইয়াছ — কিন্তু তাহার ব্যাঙ্গঢালা ভাষা বস্ত্রখানি টানিয়া লইলে দ্রৌপদীর মতো সভাসমক্ষে তাহার অপমান হইবে না ? সাহিত্যের ঐ বড় মুশকিল — ভাষার অন্তঃপুরে আত্মীয় পরিজনের কাছে সে যেভাবে প্রকাশমান, বাহিরে টানিয়া আনিতে গেলেই তাহার ভাবান্তর উপস্থিত হয়।”

জগদীশ্চন্দ্র বসুকে এই দ্বিধাদীর্নতা ব্যক্ত করেও রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের অবকাশটিকে ইংরেজি অনুবাদের জন্য কাছে টেনে নিলেন, আর ওই অনুবাদই খুব দ্রুত ইয়েট্সকে প্রণোদিত করবে গীতাঞ্জলির ভূমিকা লেখায়। যেখানে আকর কথাটি ছিল, “ I read Rabindranath every day to read one line of his is to forget all the troubles of the world.” ১৯১২-তে দ্বিতীয়বার ইউরোপ ভ্রমণের সময় গীতাঞ্জলির গান ও কবিতা অনুবাদ করছেন নিজে। এর মধ্যে চিত্রকর উইলিয়াম রদেনস্টাইন রবীন্দ্রনাথের কবিতার অনুবাদ দিয়ে দিয়েছেন ইয়েট্‌সকে। রদেনসটাইনের বাড়িতে ১৯১২-র ৭ জুলাই কবিতার আসরে ইয়েট্‌স রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ছেন, শুনছেন এজরা পাউন্ড, আরনেস্ট রীস, মে সিনক্লেয়ার, টমাস স্টার্জ মূরের মতো বিদগ্ধেরা। পড়ছেন ইয়েট্‌স —
Where the mind is without fear and the head is held high;
Where knowledge is free;
Where the world has not been broken up
into fragments by narrow domestic walls;
Where words come out from the depth of truth ;
Where tireless striving stretches it’s arms towards perfection;
Where the clear stream of reason
has not lost it’s way into the dreary desert sand of dead habit;
Where the mind is led forward by thee into ever-widening thought and action—
Into that heaven of freedom, my Father, late my country awake.

রবীন্দ্ররচনার আধ্যাত্মিকতা, আশা, সৌন্দর্যের রস পান করে মুগ্ধ শ্রোতারা। এরপর রবীন্দ্রনাথ নিউইয়র্কে চলে যাবেন বক্তৃতা দিতে আর ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব লণ্ডন রোদেনস্টাইনের প্রচ্ছদে ইয়েটসের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথের ১০৩টি অনূদিত কবিতায় গীতাঞ্জলি বা ‘Song Offerings’প্রকাশ করবে। যে কবিতাগুলি ‘নৈবেদ্য’, ‘খেয়া’ এবং ‘গীতাঞ্জলি’ থেকে নেয়া। আর তারপর ওই মিস্টিক ঋষি মুর্তিটির প্রতিষ্ঠায় ভারতবর্ষের প্রথম নোবেল পুরস্কারটি চলে আসবে বঙ্গলক্ষ্মীর নির্ভিক গলায় ১৯১৩ তে। রবীন্দ্রনাথের প্রস্তাবক স্টার্জ মূর পুরস্কার ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে লিখবেন, “ The honour should also be a great national triumph for India.” আর এসময়েই আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে ভারতীয় সাধারণ-মানসের দৈন্যতার ধারাবাহিক চিত্র। যার অভিঘাতে রবীন্দ্রনাথের ওই অভ্রংলিহ আত্মাও আনত আর ব্যথা জর্জর। ১৩ নভেম্বর ১৯১৩-র নোবেল ঘোষণার মাত্র দশ দিনের মাথায় ২৩ নভেম্বর আপ্লুত জনতার এক বিশেষ অংশ কলকাতা থেকে একটা বিশেষ ট্রেনে রবীন্দ্রনাথকে অভিনন্দন জানাতে যায় শান্তিনিকেতনে। অভিমানে আহত রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ থেকে ব্যথা ঝরে পড়ল। “ মানুষের হৃদয় ক্ষেত্রেই কবির কাজ এবং সেই হৃদয়ের প্রীতিতেই তাঁর কবিত্বের সার্থকতা। কিন্তু এই হৃদয়ের নিয়ম বিচিত্র — সেখানে কোথাও মেঘ, কোথাও রৌদ্র। অতএব প্রীতির ফসলেই যখন কবির দাবী তখন একথা তাঁর বলা চলবে না যে , নির্বিশেষে সর্বসাধারণেরই প্রীতি তিনি লাভ করবেন। যাঁরা যজ্ঞের হোমাগ্নি জ্বালাবেন তাঁরা সমস্ত গাছটাকেই ইন্ধন রূপে গ্রহণ করতে পারেন; আর মালা গাঁথার ভার যাঁদের উপরে, তাঁদের অধিকার কেবলমাত্র শাখার প্রান্ত ও পল্লবের অন্তরাল থেকে দুটি চারটি করে ফুল চয়ণ করা। কবি-বিশেষের কাব্যে কেউ বা আনন্দ পান কেউ বা উদাসীন থাকেন, কারো বা তাতে আঘাত লাগে এবং তাঁরা আঘাত দেন। আমার কাব্য সম্বন্ধেও এই স্বভাবের নিয়মের কোনো ব্যাতিক্রম হয়নি, একথা আমার এবং আপনাদের জানা আছে। দেশের লোকের হাত থেকে যে অপযশ ও অপমান আমার ভাগ্যে পৌঁছেছে তার পরিমাণ নিতান্ত অল্প হয়নি এবং এতকাল আমি তা নিঃশব্দে বহন করে এসেছি। এমন সময় কি জন্য যে বিদেশ হতে আমি সম্মান লাভ করলুম তা এখনো পর্য্যন্ত আমি নিজেই ভালো করে উপলব্ধি করতে পারিনি। আমি সমুদ্রের পূর্ব তীরে বসে যাঁকে পূজার অঞ্জলি দিয়েছিলেম তিনিই সমুদ্রের পশ্চিম তীরে সেই অর্ঘ্য গ্রহণ করবার জন্য যে তাঁর দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করেছিলেন সেকথা আমি জানতুম না। তাঁর সেই প্রসাদ আমি লাভ করেছি — এই আমার সত্য লাভ। যাই হোক, যে-কারণেই হোক , আজ ইউরোপে আমাকে সম্মানের বরমাল্য দান করেছেন। তার যদি কোন মূল্য থাকে তবে সে কেবল সেখানকার গুণীজনের রসবোধের মধ্যেই আছে। আমাদের দেশের সঙ্গে তার কোনো আন্তরিক সম্বন্ধ নেই। নোবেল প্রাইজের দ্বারা কোনো রচনার গুণ বা রস বৃদ্ধি করতে পারে না। ”

গীতাঞ্জলির আধ্যাত্মিকতা যুদ্ধ-সঙ্কুল পাশ্চাত্যকে ভাসিয়ে নিয়েছিল। আবু সয়ীদ আইয়ুব এর মতে গীতাঞ্জলি পাঠে এমন এক সত্তার মুখোমুখি হবার অভিজ্ঞতা ঘটে যা ধারণার অতীত, কিন্তু অনুভূতির অগম্য নয়। তা-ই বোধ হয় নতুন প্রাণের ঈপ্সা দিয়েছিল পাশ্চাত্যকে । আইয়ুব যেখানে ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের আত্মা অবতীর্ণ হতে দেখেন সেইখানটিতে শঙ্খ ঘোষ এক বড় আমি-র উপস্থিতিতে প্রত্যয়িত হন। প্রসঙ্গে তিনি মৈত্রেয়ী দেবীকে বলা রবীন্দ্রনাথের কথাগুলিকে স্মরণও করেন। “ আমি কোনো দেবতা সৃষ্টি করে প্রার্থনা করতে পারি নে। নিজের কাছ থেকে নিজের যে মুক্তি , সেই দুর্লভ মুক্তির জন্য চেষ্টা করি। সে চেষ্টা প্রত্যহ করতে হয়, তা না হলে আবিল হয়ে ওঠে দিন।”

অনুদিত গীতাঞ্জলিতে পুরস্কার এল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রমানস যে ছন্দে ছিল, তা বলা যাবে কি! সি এফ এন্ড্রুজ সাহেব যতই অনুবাদের গীতাঞ্জলি নিয়ে বলুন না কেন, “ The poems have in no way suffered eclipse in their strange and foreign environment. They seem rather to have gained a new and added dignity.” রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘকাল ধরে কুণ্ঠায় থেকেছেন। তাঁর বারবার মনে হয়েছে নিজের রচনাকে নিজে অনুবাদ করে নিজের প্রতি ও কলালক্ষ্মীর প্রতি অবিচার করেছেন। ১৯৩৪-এ অমিয় চক্রবর্তীকে একটা চিঠিতে লিখছেন, “ আমার কবিতার ইংরেজি তর্জমা পড়ে দেখলুম । … পড়তে অত্যন্ত লজ্জাবোধ হলো।” বুদ্ধদেব বসু-র আশা ছিল অনুবাদ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ নিজের প্রতি যে অবিচার করেছেন তা কোন সঠিক অনুবাদকের হাতে নিশ্চই সংশোধিত হবে। কিন্তু তা হল না। আর বেশ কিছুটা হতাশ হয়ে রবীন্দ্রনাথ বন্ধু স্টার্জ মূরকে চিঠি লিখছেন ১৯৩৫-এ। “ Translations, however cleaver can only transfigure dancing into acrobatic tricks, in most cases playing treason against majesty of the original. I often imagine apes to be an attempt by the devil of a translator to render human form in the mould of his own outlandish idiom.”

‘প্রথম দিনের সূর্য’ ও ‘প্রশ্ন’ কবিতা দুটির সামিপ্যে শঙ্খ ঘোষ রবীন্দ্রনাথের শেষ দশ বছরের কবিতায় গদ্যের ঝুঁকে পড়ায় যে অ-লাবণ্যের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন, প্রতিবাচনে আবু সয়িদ আইয়ুব তাকে অন্তরঙ্গতা দেননি। এবং তিনি গদ্য পদ্যের মধ্যে তেমন বিভাজিত বিন্যাসে সহমতপোষণ করেননি। রবীন্দ্র-মনন গীতাঞ্জলির অনুবাদকর্মের পর থেকে গদ্যকাব্যের স্বপক্ষে সমর্থন অনুসন্ধান করছিল। ‘পুনশ্চ’, ‘শেষ সপ্তক’, ‘পত্রপুট’ এবং ‘শ্যামলী’—তে রবীন্দ্রনাথ কবিতার নিরাভরণ সহজ সৌন্দর্যের দিকে যেতে চাইলেন। এই যাওয়াতে মনের ভেতর যে সায় তৈরি করে নিচ্ছিলেন তা তাঁর ‘গদ্যছন্দ’ প্রবন্ধে প্রকাশ পেয়েছে।

গীতাঞ্জলি ইউরোপে গ্রাহ্য হবার পর থেকে ইংরেজি ভাষার বাক্স্পন্দ বাংলার শরীরে আনতে একটা প্রেরণা পাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিশেষ করে স্বাধীনতা আর ঔদার্য নিতে চাইলেন। ‘পুনশ্চের’ ভূমিকায় বলছেনও তা। “ গীতাঞ্জলির গানগুলি ইংরেজি গদ্যে অনুবাদ করেছিলেম। এই অনুবাদ কাব্যশ্রেণীতে গণ্য হয়েছে। এই অবধি আমার মনে এই প্রশ্ন ছিল যে, পদ্য ছন্দের সুস্পষ্ট ঝংকার না রেখে ইংরেজির মতো বাংলা গদ্যে কবিতার রস দেওয়া যায় কিনা … পরীক্ষা করেছি, লিপিকার অল্প কয়েকটি লেখায় সেগুলি আছে। … গদ্যকাব্যে অতিনিরূপিত ছন্দের বন্ধন ভাঙাই যথেষ্ঠ নয়, পদ্যকাব্যে ভাষায় ও প্রকাশরীতিতে যে একটা সলজ্জ অবগুণ্ঠন-প্রথা আছে তাও দূর করলে তবেই গদ্যের স্বাধীন ক্ষেত্রে তার সঞ্চরণ স্বাভাবিক হতে পারে।”

গীতাঞ্জলি-প্রসূত এই নতুন হাওয়ার বাঁকটি বাংলা কবিতাকে যে অনেকটা আগুয়ান ভূমিকা দিল তা আজ আর সন্দেহের নয়। ফলত ভাবা যেতে পারে যে, গীতাঞ্জলির অনুবাদ সূত্রে অন্তত দুটি মহান প্রাপ্তি ঘটল আমাদের — তা হল বাংলা কবিতার মুক্তি আর বিশ্বের দরবারে বাংলা কবিতা, একটু বড় করে, বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *