Press "Enter" to skip to content

‘দাবি এক…’, আরজি কর নিয়ে বাম-বিজেপির দূরত্ব কমছে?

অমল মাজি এগজিকিউটিভ এডিটর, অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস

আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্রে এখন একটাই বিষয়। আরজি কর। গত ৯ আগস্ট এই হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও নৃশংস খুনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা দেশ। ন্যায্য বিচারের দাবিতে রাস্তায় আপামর জনতা। বেকায়দায় রাজ্যের শাসক দল, জনাবেগকে কাজে লাগাতে তৎপর বিরোধীরা। আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিচারে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করা দুই বিপরীত পক্ষের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনার দিকটি।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে একাধিক বার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দোষীর ফাঁসি, সিবিআই তদন্ত, নিহতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। তবে প্রত্যেকবারই একটি বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আর সেটা হল রাম-বামের চক্রান্ত। ক’মাস আগে লোকসভা ভোটে বিপুল জনসমর্থন পাওয়ার পর এত মানুষ যে আরজি করের বিচার চেয়ে পথে নামবেন, সেটাই হয়তো তিনি মানতে পারছেন না। আরজি কর কাণ্ডে তিনি রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করলেও কেন এত মানুষ বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, সেটাই ধরা যাচ্ছে না। সেখান থেকেই রাম-বামের চক্রান্ত ত্বত্ত।

এ দিকে সিপিএম এবং বিজেপির দাবিগুলোও প্রায় একইরকম। নির্যাতিতার ন্যায্য বিচার, দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের দাবি। দাবি এক, তবে লড়াই চলছে তাদের নিজের নিজের মতো কৌশলে। কিন্তু সেই কৌশলে মতৈক্য আসছে না। সেটা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে।

রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাম-বিজেপির হাত ধরাধরি ইতিহাসে অমিল। সে হওয়ায় যে যাই ওড়াক না কেন। কিন্তু কেরলে যখন শাসক বাম আর বিরোধী কংগ্রেস, তখন তো কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস সখ্য দেখেছে সারা দেশ। এই তো ক’মাস আগেও মমতার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতে দেখা গেছে সীতারাম ইয়েচুরিদের। বার বার স্বীকার্য, বাম আর বিজেপির ক্ষেত্রে তেমনটা হওয়া ততটা সহজ নয়। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবেশ আর পরিস্থিতি সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে পারে।

মহাভারত বলছে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র যুযুৎসু ধর্ম রক্ষার জন্য কৌরব শিবির ত্যাগ করে পাণ্ডব শিবিরে যোগ দেন এবং পাণ্ডবদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেন। ঘটনাক্রম বলছে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে, যুদ্ধক্ষেত্রে যুধিষ্ঠির একটি ঘোষণা করেন, শঙ্খ বাজানোর আগে, যিনি ধর্মের ও ন্যায়ের জন্য যুদ্ধে পক্ষ পরিবর্তন করতে চান, তিনি এইমুহূর্তে তা করতে পারেন।। এই ঘোষণা শুনে, তখন যুযুৎসু কৌরবপক্ষ ত্যাগ করে ধর্ম ও ন্যায়ের জন্য পাণ্ডব শিবিরে যোগদান করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে তিনিই একমাত্র জীবিত ধৃতরাষ্ট্রে-পুত্র।

এখানেও ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের দাবিতে লড়ছে বাম-বিজেপি। বামেদের কাছে কাঁটা বলতে শুধু ধর্মটাই। শোনা যাচ্ছে, সেদিকটা হয়তো সামলে দিতে পারেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের কেউ কেউ। বামেদের সঙ্গে আইএসএফের দ্বন্দ্ব মেটাতে যেভাবে আসরে নেমেছিলেন অধীর চৌধুরী।

কেন অধীর? এখানেও খাটছে মুখ্যমন্ত্রীর ত্বত্ত। লোকসভা ভোটের সময় অধীরের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া নিয়ে ব্যাপক সরব হতে শোনা গিয়েছিল মমতাকে। প্রদেশ কংগ্রেসে ঘোর মমতা-বিরোধী হিসাবে পরিচিত অধিরকে ইন্ডিয়া জোট নিয়েও কম ঝক্কি সামলাতে হয়নি। সম্প্রতি আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কলকাতায় আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্যকে সামনে রাখছে। কিন্তু মুর্শিদাবাদে পথে নামার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি পর্যন্ত লেখেন অধীর। অর্থাৎ অধীর আছেন অধিরেই। বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ধারণা সঠিক না কি বেঠিক, তা বিচার্য নয়। মমতার পতনে তিনি যেকোনো সময় যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত নয়।

আর বামেদের কথা নতুন করে বলার নয়। তারা বিজেপিকে নিয়ে কখনোই ইতিবাচক কিছু ভাবতে নারাজ। তাই বলে ছোটখাটো ব্যতিক্রম যে নেই, সেটাও নয়।তখনকার বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সুসম্পর্ক অনেকেরই অজানা নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, এক সময়ে তো কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে কলকাতার ব্রিগেডে অটলবিহারী বাজপেয়ির সঙ্গে রীতিমতো হাত ধরাধরি করে জনসভা করেছিলেন জ্যোতিবাবু।

আপাতত সামনে নবান্ন অভিযান। এই চরম জনআন্দোলনের মাঝে অস্বস্তিতে ফেলেছে সিপিএমকে। জানা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ব্যানারে ডাকা ওই কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপি। যাতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কর্মসূচিতে প্রভাবিত বামেরা। একাংশের বামমনস্করা অত তলিয়ে না দেখে ওই কর্মসূচির প্রচার করছেন। হয়তো স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন কেউ কেউ। এটাই চিন্তায় ফেলেছে বামেদের। তাদের সমর্থকরা যাতে বিভ্রান্তির স্বীকার না হন, সেদিকে তাকিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা প্রচারও চলছে। কিন্তু এই উত্তাল পরিস্থিতিতে দাবি যেখানে এক, সেখানে কত দিন তারা লাল আর গেরুরার সংমিশ্রণ ঠেকাতে পারে, সেটাই দেখার!

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *