অমল মাজি এগজিকিউটিভ এডিটর, অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস
আপনি কি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা? তাহলে নিশ্চয়ই সিভিক ভলান্টিয়ার নামটার সঙ্গে পরিচিত। কী কাজ এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের? এ দিক – ও দিক ঘেঁটে জানা গেল, সিভিক ভলান্টিয়ারদের মূল কাজ হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শান্তি বজায় রাখা, জনগণের সেবা করা, জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োগ করা।
আপনি কি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা? তাহলে নিশ্চয়ই সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজকর্ম সম্পর্কে ন্যূনতম কিছু চোখে লাগা ঘটনা চাক্ষুষ করে থাকতে পারেন। রাস্তায় সিগন্যালে, অথবা পাড়ায় ছোটখাটো কোনো ঘটনায় পুলিশের গাড়ি ঢুকলে সওয়ারির আসনে তাঁদের উপস্থিতি চোখ এড়ানোর নয়। এ সবে অবশ্য কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। তাহলে অস্বস্তিটা কোথায়?

প্রথমে আসা যাক রাস্তার সিগন্যালে। আপনি যতই নিয়মকানুন মেনে চলতে থাকুক না কেন, সিভিক যদি আপনাকে টার্গেট করে নেয়, তাহলে কপালে দুঃখ অবধারিত। তৎক্ষণাৎ মোবাইল অ্যাপ থেকে আপনার গাড়ির কাগজপত্র সংক্রান্ত তথ্য দেখে নিয়ে চালককে ভড়কে দেওয়াই তাঁদের প্রথম কাজ। সেই ভড়কানিতে কাজ না হলে, স্যারকে ডাকার হুশিয়ারি। অগত্যা আপনি আর কি করবেন! পুলিশের ‘সহযোগী’ বলে কথা।
কিন্তু কোনো কোনো সময় তাঁরা দাপটের দিক থেকে পুলিশকেও ছাপিয়ে যান। পাড়ার ছোটখাটো ঝামেলায় এক পক্ষ থানায় গেলে যদি পুলিশ আসার দরকার হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে পুলিশের নির্ভরযোগ্য ‘গাইড’ সেই সিভিক ভলান্টিয়ারই। কারণ, এলাকার সামাজিক মানচিত্র তো আছেই, রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পর্কে তাঁদের থেকে ওয়াকিবহাল আর কেই বা আছেন! ফলে কোনো ঘটনার পুলিশি তদন্তেও তাঁদের একটা ভূমিকা থেকে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সে যতই তাঁদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস হোক না কেন! কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা?
বছর খানেক আগের পুরনো খবর বলছে, রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের তরফে একটি বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২৯২৩ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে এই গাইডলাইন প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল। সেইমতো সার্কুলার জারি করেছিল রাজ্য সরকার। সার্কুলারে বলা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলাজনিত কোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজ তাদের দেওয়া যাবে না। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবে ভিড় সামলাতে, বেআইনি পার্কিং রুখতে এবং মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে সাহায্যকারীর ভূমিকায় থাকবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।
কিন্তু সিভিকদের দাপট তাতেও কমেনি। কারণ তাঁরা পুলিশের সহযোগী আর বিরোধীদের মতে, শাসক দলের নেতাদের হাত রয়েছে তাঁদের মাথায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, “পুলিশ যেমন কিছুদিন পর ট্রান্সফার হয়ে অন্যত্র চলে যায়, সিভিকদের ক্ষেত্রে সেসবের বালাই নেই। এঁরা নিজের নিজের থানা এলাকায় থেকে যান বছরের পর বছর ۔۔۔তারফলে নিজের জমিদারি ভেবে নেয়”। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি এলাকার মহিলাদের উত্যক্ত করা, চমকানোর ভুরি ভুরি অভিযোগও উঠে আসে প্রায়শ।
এখন প্রশ্ন, আচমকা কেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে এই বিষদগারণ? কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। রাস্তাঘাটে তো বটেই, এখন হাসপাতালের ভিতরেও তাঁদের নগ্নরূপ প্রকাশ্যে এসেছে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আরজি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনা এবং সেই ঘটনার রেশ ধরে ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের নিন্দনীয় ঘটনা। রাস্তা থেকে পাড়া, হাসপাতাল – বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সমাজ, শাসক দল শুধু নয়, নিজেদের অস্তিত্বের জন্যও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেন সিভিকরা। জনমনে জমতে থাকা ক্ষোভ সে কথাই বলছে!




Be First to Comment