লেখক মাত্র একটি বাক্যেই কী অনবদ্যভাবে প্রতিটি মানবজীবনের অন্তহীন সারবত্তা প্রকাশ করেছেন। পড়লেন অনির্বাণ চৌধুরী
পেশায় শিক্ষক, লেখক সূতনু মিত্রের THE TALES OF 10 NUTANPALLY বইটি হাতে পাওয়ার পর, প্রথমেই নজর গেল লেখক- পরিচিতি এবং বইয়ের নাম ভূমিকার পাতা। কর্মসূত্রে শিক্ষকতা করলেও সূতনুবাবুর পারিবারিক সূত্রে বেড়ে ওঠা মূলত সংগীতের আবহাওয়ায়। ডক্টর ধ্রুব তারা যোশীর কাছে ভারতীয় রাগপ্রধান সংগীতের তালিম নিয়েছেন সূতনুবাবু, রবীন্দ্র সংগীত এবং ঘুড়ি ওড়ানো যাঁর বিশেষ পছন্দের শখ সেই সূতনুবাবু হাত পাকিয়েছেন পাশাপাশি তাঁর কলমের মধ্যে দিয়েও। 14TH AUGUST: A LETTER তার লেখা প্রথম উপন্যাস। যার পরে সূতনু আবারো কলম ধরলেন তার সদ্য প্রকাশিত বই THE TALES OF 10 NUTANPALLY – তে। বইয়ের নাম ভূমিকায় ( My words… A Preamble) শুরুতেই লেখক প্রথমেই পাঠকের আকর্ষণ কেড়ে নেবেন প্রথম লাইনটির মধ্যে দিয়ে – “Childhood is a time which is used by all except child!” প্রতিটি মানবজীবনের এক অনন্ত সারবত্তা লেখক মাত্র একটি লাইন খরচ করেই কি অসামান্যভাবে তুলে ধরেছেন।
এ কথা ঠিকই যে শৈশব কাল পেরিয়ে যাওয়ার পরে আমরা সকলেই যে ফেলে আসার শৈশবের প্রতি স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়ি, এই শৈশবের দিনগুলিতে বেড়ে ওঠার সময়ে সেই আমরাই কি আশ্চর্যভাবে হেলায় হারিয়ে ফেলি সেই মূল্যবান সময়কে। অথচ এই আমাদের মানবজাতির বিবর্তনের নিয়ম জগজিৎ সিং এর শায়েরীর উল্লেখ করে, লেখক স্পষ্টত ভূমিকাতেই জানিয়ে দিয়েছেন বইটির মূল সারমর্ম – নতুনপল্লী আসলে একটি কাল্পনিক স্থান যে স্থানের আসল নাম বা পরিচয় হয়তো পাঠক সরাসরি জানতে পারবেন না তবে সমগ্র বইটির মধ্যে দিয়ে লেখকের ফেলে আসা শৈশবজীবনের এক নস্টালজিক কাহিনীর স্বাদ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে পাঠকের কাছে।

লেখক তাঁর কল্পনায় রূপকের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর সেই নস্টালজিক অভিজ্ঞতাময় জীবনের প্রতিচ্ছবি। ছোট ছোট আকর্ষণীয় কাহিনীর মধ্যে দিয়ে যেখানে প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে লেখকের প্রিয় কার্জন গেট, জয়নগরের মোয়া থেকেশিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর বিপর্যয়ের পর আকাশে ফুটে ওঠা রামধনু দেখার বিস্ময় এর গল্প; এর পাশাপাশি ‘বিমল দাদু’, ‘ছোটকুদা’, ‘চয়ন দা’ গণিত শিক্ষক ‘মৃত্যুঞ্জয় খান’, ‘রঞ্জু আঙ্কেল, ‘ডঃ দত্ত’ প্রমূহ চরিত্রদের মধ্যে দিয়ে এক একটি মানুষের কীর্তিকলাপ। এছাড়া তার বাল্যকালের শহর বর্ধমানের আরোও বেশ কিছু বিশেষ জায়গার কথা। লেখকের সংগীত সত্তার পরিচয় পাওয়া গেছে বইটির বেশ কয়েকটি ছোট ছোট অংশের মধ্যে দিয়ে, যার মধ্যে বাউল গান এবং শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার বিবরণে লেখক বারবার ফিরে দেখেছেন তার শৈশবের ফেলে আসা সেই বেহুলা নদীর তীরকে। যেখানে এখনো নীরবে বসে হয়তো কোন এক অদৃশ্য ভায়োলিন বাদক তার বর্তমান দিনযাপনের সময়গুলিতে স্মৃতিমেদুর সুর তুলে চলেছে। ফেলে আসার সময়ের প্রতি।
সমগ্র বইটি খুব সচ্ছল এবং সহজ ইংরেজিতে ছবির মত নিমেষে পড়ে ফেলা যায়, যা শুধু সূতনুবাবুর ভাষার প্রতি দক্ষতা এবং সাবলীলতা একজন লেখক হিসেবে পাঠকের কাছে নিশ্চিতভাবে তুলে ধরবে এ কথা যেমন ঠিক তেমনই পাঠকের কাছে অত্যন্ত বেশি পাঠমনোরঞ্জক হবে এ বিষয়ে কোন দ্বিধা নেই। সহজ ন্যারেটিভ এর মধ্যে দিয়ে লেখক বেশ দক্ষতার সাথেই এক অদ্ভুত ফ্যান্টাসি গড়ে তুলেছেন এবং কয়েক জায়গায় অনবদ্য হিউমারের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কাহিনী।
সব মিলিয়ে ১০ নম্বর নূতনপল্লী, সেই বিচরণক্ষেত্র যেখানে পাঠক লেখকের হাত ধরে, সেইসব বিচিত্র মানুষ ও তাদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঘুরে দেখতে চাইবেন জীবনের প্রতিটি দৈনন্দিন ক্ষেত্র এবং বিশেষ কিছু আকর্ষণ। সিনেমাটোগ্রাফার জয়দীপ দে তার অনবদ্য ফটোগ্রাফির মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন আর এক অসামান্য নস্টালজিক দৃশ্য, যা মৌসুমী ব্রহ্মচারীর দায়িত্বে অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে এবং সুদৃশ্য প্রচ্ছদ হিসেবে নজর কেড়েছে। সম্পাদক ও প্রকাশক ধীমান ব্রহ্মচারী তার ‘এবং অধ্যায়’-র বাংলা বই প্রকাশনার সাথে সাথে হাত পাকালেন এবার ইংরেজিতেও। মাঝারি প্রকাশক হিসেবে একজন আঞ্চলিক লেখকের বইকে অত্যন্ত সযত্নে এবং প্রকারে বইটির সামগ্রিক প্রকাশ করেছেন অত্যন্ত যত্ন সহকারে। যেদিকটিও পাশাপাশি পাঠকমহলেও বেশ প্রশংসার দাবি রাখবে।
THE TALES OF 10 NUTANPALLY / SUTANU MITRA
PUBLISHERS: EBONG ADHYAY/ PRICE: 500.00




Be First to Comment