Press "Enter" to skip to content

উৎসবের উঠোনে আরজি কর বীভৎসতা

অরুণাভ গুপ্ত

একটা পোস্ট কার্ড

একটা চিঠি লিখে খুঁজে পেতে কোনো একটা ডাকবাক্সে ফেলতে হবে। চিঠিটা জরুরি। নাম না-জানা, না দেখা এক অপরিচিতা সামান্য বয়সি মহিলা ডাক্তার। কোনো দিন কোনো ভাবে কখনো দেখা হতো কি না সন্দেহ আছে। অথচ একটা কদর্য-নারকীয়-পাশবিক অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে, তাঁকে যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হল। ভূমিকায় নামেই মানুষ, কিছু মানুষের বিকৃত রুচির জান্তব উল্লাস। অপ্রত্যাশিত ঘটনার ধাক্কায় ডাক্তার ম্যাম আপনি অগণন মানুষের ঘরের সদস্য হয়ে গেছেন। উঠতে-বসতে প্রতিটি পরিবার মেয়ে হারানোর অকথ্য বেদনায় জর্জরিত। মানুষ পারিপার্শ্বিক ব্যস্ততায় নিজস্ব যন্ত্রণা ভুলতে পারে বা ভোলে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে অসম্ভব। কোনো সাজানো-গোছানো প্রলেপ দেওয়া কথা নয়, কারণ ডাক্তার ম্যাম আপনি যে একজন ভয়-ডরহীন কাঠামোয় খোদিত চরিত্র, একটা দুষ্প্রাপ্য উদাহরণ এবং প্রতীক তো বটে।

এখানেই স্বাতন্ত্রে স্বতন্ত্র, এখানেই ব্যতিক্রম, এখানেই রক্তের সম্পর্ক না থেকেও নাড়ির টান, এখানেই সব পরিবারের হুঙ্কার, এখানেই কোনো নিজস্ব গণ্ডিতে গণ্ডিবদ্ধ নন আপনি, আপনি সর্বজনীন। এই ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে অভাববোধ ফিকে হয় না কি? আপনি না থেকেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, জীবিত তিনি থেকে মৃত তিনি যেন অনেক বেশি শক্তিশীল, তাই প্রশ্ন তুলে দিতে পেরেছেন- গঙ্গা বইছো কেন? ডাক্তার ম্যাম নিশ্চয় চলমান আওয়াজে চলতে চলতে প্রতিদিন প্রতিবার বেঁচে আছেন, এবং থাকবেন, ব্যাটন যে হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে স্থির লক্ষ্যে। হ্যালো- কোনো এক নামের ডাক্তার দিদি, পোস্ট কার্ডের ছোট্ট পরিসরে যা লেখার লিখলাম, বাকি রোজই ঘটনাবহুল ঘটনায় পুষ্ট বিষয় আলোচনার ডেস্কে আলোচিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ কোনোমতেই রাশ আলগা করতে রাজি নয়। যে যার ময়দানে তুখোড় সক্রিয়। একটা অদৃশ্য স্পিরিট নেপথ্যে কাজ করছে সকলের মনে। যেখানে বহু নয়- ১। ডাক্তার ম্যাম কি বুঝলেন? আপনার ডেথ সার্টিফিকেট খাতায়-কলমে-নথিতে, বিশ্বাসে নয়।

একটা প্রশ্ন

নিজের কাছে নিজের। এতো অকুতোভয় হয় এসপার, নয় ওসপার ইস্পাত কঠিন জেদের মালিক হওয়া কি করে সম্ভব হল। প্রচুর কাটাছেঁড়ার পর সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম- এ জিন আধ্যাত্মিক জিন। জ্ঞাতে কিংবাা অজ্ঞাতে আপনাতে বপিত হয়ে বটগাছে পরিণত হল। আপনাকে তারে বেঁধে দিল- দুর্বল ব্যক্তি কখনও আত্মাকে জানতে পারেন না। ডাক্তার মেয়ে সাঁড়াশি চাপে আপনি বুঝে ফেললেন- “নিরাশ হোয়ো না; পথ বড় কঠিন- যেন ক্ষুরধারের ন্যায় দুর্গম, তা হলে নিরাশ হোয়ো না; জাগো এবং তোমাদের চরম আদর্শে উপনীত হও।” কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না স্বামীজী প্রদত্ত এমন অমোঘ বাণী আপনার অন্তরে এতো আটোসাটো ভাবে বাসা বাঁধল কোন উৎস থেকে! স্বামীজীর রচনার সঙ্গে পরিচিত নন এমন বাঙালি খুবই কমই আছেন। তাঁকে পড়ে, উপলব্ধি করে, চর্চায় থেকে এবং লিখে বিদগ্ধ সমাজ গড়ে উঠেছে। তাঁরা বিশেষজ্ঞ, তাঁরা সমাদৃত। কিন্তু এমন অকল্পনীয় ভূমিকায় কেউ কি অবতীর্ণ হতে পেরেছেন। না, নেই। ওই বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতার মধ্যে বিচরণ। স্বামীজী বলেছেন, যে রাষ্ট্র যে জাতি যে সমাজ মেয়েদের সম্মান করতে জানে না তার উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়। বহু চর্চিত বহুবার উচ্চারিত, কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটেনি, কিংবা ঘটতে দেওয়া হয়নি। বোধহয় বিশেষ কোনো বাধা প্রাচীর হয়ে কাজ করছে। এখনও। অনেক ভাবনা এক জায়গায় জড়ো হল, কিন্তু মূল প্রশ্নের জবাব বাা সূত্রে অধরাই রয়ে গেল। থাকুক, বরং উত্তর একটাই হোক- মহাজীবন এ ভাবেই আসে ধমকেতু বৈশিষ্ট্যে, সমূলে সব নাড়িয়ে দিয়ে অদৃশ্য হয়। আফটার এফেক্ট অবশ্যম্ভাবী। ডাক্তার ম্যামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলছে, তিনি আন্তরিক উপলব্ধি করেছিলেন- The meaning of life is to give life meaning. আর তাই মনে গেঁথে নিলেন নিজস্ব পণ- Some roads you have to take alone. No family, no friends, no partner just you and God…ওই… ওই হল আধ্যত্মিক শক্তি আর কোনোটাই নয়। আত্মবিশ্বাস… I Can.

পুজোর আমেজ

আছে বইকি। আমেজ বলতে লম্ফ-ঝম্ফ, গান্ডে-পিন্ডে খাওয়া বোঝায় না। সারা বছরের মধ্যে পুজোর কটা দিন পরিবার কেমন জানি মেজাজি হয়ে পড়ে। পুরো ব্যাপারটা অবশ্যই মনের। কখন কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে মনের মালিক স্বয়ং জানেন না। আরজি কর বীভৎসতায় জনসাধারণ মানসিক ‘ভারসাম্য’ হারিয়েছেন। এর প্রভাব সাময়িক না চিরস্থায়ী আগেভাগে বলা অসম্ভব। যেহেতু মনসংক্রান্ত। বলা বাহুল্য এর জেরে পুজো কেন্দ্রীক উৎসবে কতটা প্রভাব পড়ল হিসাব-নিকাশ নিশ্চিত করে বলা একইরকম অসম্ভব। তবুও মানুষ যে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরলেন, সেলফি তোলার হিড়িক, মর্জিমাফিক খাওয়াদাওয়া কোনোটাতেই হয়তো খামতি পড়ল না অনেকের। ঘটনা হল, কম-বেশি একটা ফ্যাক্টর হতে পারে না। কী আসে-যায়। ফ্যাক্টর সেখানেই যেখানে হারজিতের পাঞ্জা। খটকা লাগে যখন শুনি বা পড়ি- ডাক্তারদের একটা এথিক্স আছে। অবশ্য-অবশ্য-অবশ্য। ধন্ধ, এই কর্তব্যজ্ঞান শুধুমাত্র তাঁদের বেলায় প্রযোজ্য। অন্যান্য পক্ষের দায়বদ্ধতা নেই? বোকা মাথার আমি আমাকে বলছে- একজন অতিনগণ্য মানুষেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে, তারতম্য থাকলেও। যে দায়বদ্ধতার পরিচয় ‘মনুষ্যত্ব’। যা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন আমরা বিশ্বাস করি আইনের চোখে সবাই সমান।… তাই মাঝরাতে কিংবা ভোরে পুজো পরিক্রমা সেরে বাড়ি ফেরার পর বিছানায় দেহ সঁপে দিয়ে- হয় মানুষ গভীর ঘুমে ডুবে গেল, নয় আধা ঘুম, আধা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকল, অথবা বাকি রাত নিদ্রাহীন একটা অস্বস্তির কাঁটা গলায় বিঁধে এ পাশ- ও পাশ করল। যা করার মানুষ করুক, হস্তক্ষেপ অনধিকারচর্চা।

আমার আমি আমার মতন অটুট বিশ্বাসে ভাবলাম- আবারও সকাল আসে, কাটিয়ে অভিমানী রাত, আবার রোদেলা হাসি ছড়িয়ে দেয় সুপ্রভাত….

এই সিরিজের চতুর্থ কিস্তি পড়ুন এখানে: উৎসবে সামিল হওয়ার মনটাই নেই!

এই সিরিজের চতুর্থ কিস্তি পড়ুন এখানে: পুজোর উৎসব ও একটি গল্প কথা

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *