জামুড়িয়া: মিড ডে মিলে মুরগির পচা মাংস খাওয়ানোর অভিযোগ উঠলো। এই অভিযোগে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুড়িয়া ব্লকের বেলডাঙ্গা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষককে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখালেন পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা।
জানা গেছে, জামুড়িয়া শিক্ষা চক্র ২-এর অন্তর্গত বেলডাঙ্গা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে চলছিল দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরীক্ষা। বুধবার সেই পরীক্ষার তৃতীয় দিনেই এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এই মাংস খেয়ে একাধিক পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। সেই সংখ্যাটা কমবেশি ২৫-এর মতো।
পড়ুয়াদের অভিভাবকদের অভিযোগ, এদিন সকালে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামপ্রসাদ মুহুরী স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নার জন্য রাখা রাধুনীদের রান্নাবান্না করার আগেই নিজে থেকে মুরগির মাংস রান্না করা শুরু করে দেন। এ বিষয়ে তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা মুরগির মাংস পরীক্ষা করেন। গন্ধে তারা বুঝতে পারেন যে, মুরগির মাংস পচা ও বাসি।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পড়ুয়াদের মধ্যে। বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী যারা ইতিমধ্যেই রান্না করা খাবার খেয়ে নিয়েছিল তারা বমি করতে থাকে। বিষয়টি সম্পর্কে চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়তে ঐ স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা কেন পচা মুরগির মাংস দেওয়া হল এই দাবি করে অবিলম্বে ঐ প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে সরানো হোক এই দাবিতে সোচ্চার হন। বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের দাবি, এর আগেও বেশ কয়েক দফায় এই প্রধান শিক্ষক এ ধরনের আচরণ করেছেন। যার জন্য তারা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। তবে এবার প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কান্ড কারখানা সামনে আসায় আর তাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে তাই তারা অবিলম্বে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বাতিল করার দাবি জানান।
গোটা ঘটনার খবর পেয়ে জামুরিয়া ব্লকের জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ভোলানাথ গোপ তড়িঘড়ি পৌঁছান স্কুলে। আসে জামুড়িয়া থানার কেন্দা ফাঁড়ির পুলিশ। শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ও পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি জানান, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ বিষয়ে কে কখনোই বরদাস্ত করা হবে না। বিষয়টিকে নিয়ে স্কুল ইন্সপেক্টরকে জানানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেই জানিয়েছেন।
যদিও এ বিষয়ে স্কুল ইন্সপেক্টর দেবজ্যোতি দাস জানিয়েছেন, যে মাংস নিয়ে আসা হয়েছিল রান্নার জন্য সেটি রান্না করা হয়নি । সেই রান্নার আগেই ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে কেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ ধরনের মাংস কেন নিয়ে এসেছিলেন সে সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যায় কোন বিষয় লক্ষ্য করা গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।
স্কুল ইন্সপেক্টর বলেন, যে সকল পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো, তাদেরকে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি নিয়ে গেছেন ।
যদিও যে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে এসেছে তিনি এই ঘটনার পরে বিক্ষোভের মুখে পড়ে স্কুল ছেড়ে চলে যান। তার কাছ থেকে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে, ঘটনার জানাজানি হওয়ার পরে স্কুলে গিয়ে দেখা বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে স্কুলের পাশেই বমি করতেও দেখা যায়। তবে তারা ঐ রান্না করা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
জানা গেছে, এই স্কুলে ১৩৮ জনের মতো আদিবাসী ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে।