সালানপুর : ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছিল একটি পূর্ণ বয়স্ক হায়না। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর সেই হায়নাকে মুন্সিয়ানার সঙ্গে খাঁচা বন্দি করল বন বিভাগ।
জানা গেছে, সালানপুর থানার অন্তর্গত সালানপুর গ্রামে বাড়ি নিমাই প্রামাণিকের। ইসিএলের প্রাক্তন কর্মী নিমাই বাবুর বসতবাড়ির সঙ্গেই ছোট একটি ঘর নানা রকম জিনিসপত্র রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। আগে এখানে পোস্ট অফিস চলত। ২১ তারিখ রাত ন’টা নাগাদ হঠাৎই বাড়ির লোকজন খেয়াল করেন যে বড়সড় দুটি হায়না তাদের উঠোনে ঘোরাফেরা করছে। এরপরই বাড়ির লোকজন তাদের তাড়া করলে একটি কোনক্রমে পালিয়ে গেলেও অন্যটি পাশের ছোট ঘরে ঢুকে পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে ভয়ে বাড়ির লোকজন ওই ঘরটির দরজা বন্ধ করে দেন। সারারাত হায়নাটি ওই ঘরে খাটের তলায় লুকিয়ে ছিল। ঘরের একটি দরজা এবং একটি জানালা বন্ধ করে রাখা হয়। সকাল হতেই গ্রামবাসীরা হায়নাটিকে দেখার জন্য ভিড় করেন।
ইতিমধ্যে রূপনারায়ণপুরে বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসে খবর গেলে বন বিভাগের লোকজন খাঁচা, জাল ইত্যাদি নিয়ে হয়নাটিকে ধরার জন্য সেখানে পৌঁছান। এদিকে ঘটনাটি চাউর হওয়ায় বিশাল পরিমাণ মানুষজন সালানপুর গ্রামে জড়ো হন। তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকেও। মানুষজনের চিৎকার চেঁচামেচিতে হায়নাটি খাটের তলাতেই চুপচাপ শুয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ দরজার বাইরে খাঁচা পেতে অপেক্ষা করার পরও হায়নাটি বেরিয়ে না আসায় বাধ্য হয়ে ঘরের জানালা দিয়ে ছোট পটকা ফাটানো হয়। এতেই ভয় পেয়ে খাটের তলা থেকে হায়নাটি দরজা দিয়ে পালাতে গিয়ে খাঁচার ভেতরে ঢুকে যায়।
এরফলে ২১ নভেম্বর রাত ৯টা থেকে চলতে থাকা শিহরণের শেষ হয় ২২ নভেম্বর বেলা প্রায় তিনটে নাগাদ। এ প্রসঙ্গে আসানসোল টেরিটোরিয়াল রেঞ্জ অফিসার বিশ্বজিৎ শিকদার বলেন, হায়নাটিকে উদ্ধারে বন বিভাগের কর্মীদের অত্যন্ত সহায়তা করেছেন গ্রামবাসী, পুলিশ এবং বহু সমাজ সচেতন ব্যক্তি। তাদের সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
জানা গেছে এই হায়নাটিকে বর্ধমান চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে। এ প্রসঙ্গে রেঞ্জ অফিসার শ্রী শিকদার বলেন, সালানপুরের আশেপাশে অনেক কয়লাখনি আছে। এইসব খনি অঞ্চল হায়নাদের বসবাসের আদর্শ জায়গা। তিনি বলেন, সাধারণত অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির এই হায়না মানুষজনের সামনাসামনি হতে চায় না। তারা হাড়গোড়, মরা জীবজন্তু খেয়ে এলাকা সাফ সুতরো রাখে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু দাস এবং অন্যান্যরা বলেন, ২১ নভেম্বর রাতে দুটি হায়না নিমাই বাবুর বাড়িতে দেখা গিয়েছিল। তার মধ্যে একটি পালিয়ে গেছে, সেটিকে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এলাকায় জঙ্গল কমেছে, অন্যদিকে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে সচেতনতার কারণে তাদের হয়রানিও কম হচ্ছে মানুষের হাতে, ফলে তাদের সংখ্যা বাড়ছে। নানা কারণে প্রায়শই তারা গ্রামের ঘরে চলে আসছে। দিন ১৫ আগে খুদিকা গ্রামের একটি অংশে বড়সড় একটি হায়না দেখতে পেয়েছিলেন একাধিক গ্রামবাসী।
সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্টুবাবু বলেন, এই সময় মানুষজনের একটু সতর্ক থাকা উচিত। যদিও ফরেস্ট রেঞ্জার বিশ্বজিতবাবু বলেন, সহজে হায়না মানুষের ক্ষতির কারণ হয় না। তাই কেউ যেন এদের দেখতে পেয়ে উত্যক্ত না করেন, বা মেরে না ফেলেন। সেই বিষয়টি সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে। বন বিভাগ এ সংক্রান্ত সহযোগিতায় সর্বদা তৎপর আছে বলে রেঞ্জ অফিসার উল্লেখ করেন।










