Home / খবর / জেলায় জেলায় / উত্তরবঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টির তাণ্ডব! দার্জিলিংয়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু

উত্তরবঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টির তাণ্ডব! দার্জিলিংয়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু

গত ২৪ ঘণ্টার টানা অতি ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। পাহাড়ে দার্জিলিং জেলাজুড়ে ধস, রাস্তা ভেঙে পড়া, সেতু ধসের ঘটনায় জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত। সমতলে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় ফুলে উঠেছে নদী, তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা। এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, চলছে উদ্ধার অভিযান।

ধস ও সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন দার্জিলিং

মিরিকে একাধিক জায়গায় ভয়াবহ ভূমিধসের পাশাপাশি লোহার সেতু ভেঙে পড়ায় অন্তত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেছে। প্রবল বৃষ্টিতে সিকিম, কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন।

দিলারামের কাছে প্রধান সড়কে ধস নামায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কুর্সিয়ং-এর কাছে হুসেন খোলা অঞ্চলে জাতীয় সড়ক ১১০ ধসে অবরুদ্ধ। পেডং-রিশিখোলা রাস্তায় (NH-717E) ধসের কারণে যাতায়াত বন্ধ। গেয়াবাড়িতে নতুন করে ধস নামায় মিরিকের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

সিলিগুড়ি ও মিরিকের সংযোগকারী দুধানিয়ার বলাসন নদীর উপর লোহার সেতুটি ভেঙে পড়েছে, ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ। রোহিণী রোডেরও বেশ কিছু অংশ নেমে গেছে পাহাড়ের তলানিতে।

পাহাড়ে পর্যটকরা আটকে

আবহাওয়া দফতর আগে থেকেই দার্জিলিং ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছিল। শনিবার গভীর রাতে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টি রবিবার সকালে আরও তীব্র হয়। সকাল ৮.৩০ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিংয়ে বৃষ্টি হয়েছে ২৬১ মিমি, যা আইএমডি-র হিসাবে “অতি ভারী বৃষ্টি”।

সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বহু পর্যটক বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন। জিটিএ প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আপাতত রক গার্ডেন ও টাইগার হিলের মতো পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে এবং ধসপ্রবণ এলাকায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

সমতলেও তীব্র বৃষ্টি ও বন্যার আশঙ্কা

কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলাতেও গত ২৪ ঘণ্টায় যথাক্রমে ১৯০ মিমি ও ১৭২ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিতে নিচু জমি ও বন্যাপ্রবণ এলাকায় জল জমে তৈরি হয়েছে বন্যার পরিস্থিতি।

তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা ও রাইডাক সহ একাধিক নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়ছে। তিস্তা বাজার সংলগ্ন এনএইচ-১০ এর কিছু অংশ জলমগ্ন। প্রশাসন জানিয়েছে, পাহাড় থেকে জল নামার ফলে সমতলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

উদ্ধার ও ত্রাণ জোরদার

প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। পাহাড়ের দুর্গম গ্রামগুলিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। সমতলে দুর্বল বাঁধগুলির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, নদীর জলস্তর পর্যবেক্ষণ চলছে।

সতর্কতা ও পূর্বাভাস

দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার—এই পাঁচ জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি রয়েছে। তবে, আজ বিকেল থেকে উত্তরবঙ্গের বৃষ্টির দাপট পুরোপুরি কমে যাবে। আর আগামী দিনে কোনো ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *