উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়
বারুইপুরের পাল বাড়িতে চলছে তিন শতাধিক বছরের দুর্গোৎসব। জমিদারি প্রথা বিলীন হলেও এখনও অটুট রয়েছে আচার-অনুষ্ঠান আর প্রাচীন ঐতিহ্য।
কথিত আছে, পাল পরিবারের পূর্বপুরুষ জমিদার উমেশচন্দ্র পাল একদিন আমবাগানে হাঁটতে গিয়ে দেখেছিলেন লাল পাড় শাড়ি পরা এক তরুণীকে। রাতে স্বপ্নাদেশে সেই তরুণীই জানান, তিনি দেবী দুর্গা। তাঁরই নির্দেশে শুরু হয় পাল বাড়ির দুর্গাপুজো। সেই থেকে আজও চলে আসছে পুজো, জমিদারিত্ব না থাকলেও ভক্তি ও রীতিনীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বারুইপুরের মদারাট পঞ্চায়েতের এই পুজোয় এখনও ভিড় জমে দূরদূরান্ত থেকে। নবমীর দিন অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পুজো। একইসঙ্গে পাল পরিবারের পুরনো রীতি অনুযায়ী নবমীতে হয় কাদা-মাটি খেলা— গোটা পাড়া ঘুরে প্রতিটি সদস্য মেখে নেন মাটির ছোঁয়া।
পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে। পরিবারের সদস্যরা আজ রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও দুর্গাপুজোর ক’দিন সকলে একত্র হন। বৈদিক নিয়মে হয় অষ্টমী ও নবমী পুজো। সন্ধিক্ষণে মালসায় ধুনো পোড়ানো হয় রীতি মেনে।
এ পুজোয় ছাগ বলি হয় না, পরিবর্তে শস্য বলি দেওয়া হয়। প্রতিমাকে সাজানো হয় ডাকের সাজে, আর লকারে রাখা সোনার গয়না পরানো হয় দেবীকে। দশমীতে বিসর্জনের আগে সেই গয়নাই আবার তুলে রাখা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভোগে থাকে লুচি, আলুর দম, সুজি, আর সকালে চিঁড়ে-বাতাসা।
নবরাত্রি উপলক্ষে পরিবারের বিবাহিতা মহিলারা পালন করেন উপবাস ও বিশেষ রীতি। নবমীর দিন বাস্তুঠাকুরের উদ্দেশে নিবেদন করা হয় শ্রদ্ধার্ঘ। আর জমিদারি প্রথা চলে গেলেও আজও দশমীর দিন দেবীকে কাঁধে চাপিয়ে সদাব্রত ঘাটে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেন পাল পরিবারের সদস্যরা।
বারুইপুরের পাল বাড়ির এই দুর্গোৎসব তাই কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং তিনশো বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উত্তরাধিকার।