রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন পর্বে অন্তত ১০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে বলে প্রাথমিক হিসাব পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুথ লেভেল অফিসারদের কাছ থেকে প্রতিদিন যে তথ্য কমিশনের হাতে আসছে, তার ভিত্তিতেই এই সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের সময় বহু জায়গায় দেখা গেছে, ফর্ম পূরণ না করেই ফেরত এসেছে। সব ফর্ম জমা হয়ে চূড়ান্ত পর্যালোচনা হলে বাদ পড়ার সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই কমিশনের ধারণা।
এই ১০ লক্ষের মধ্যে ৬.৫ লক্ষ মৃত ভোটার রয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছেন স্থানান্তরিত, নিরুদ্দেশ এবং একাধিক জায়গায় নাম থাকা ভোটারও। শতাংশের হিসাবে উত্তর কলকাতায় বাদ পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জেলা ভিত্তিক সব তথ্য কমিশনের কাছে পৌঁছে যাবে বলেই জানা গিয়েছে। ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত খসড়া তালিকা থেকেই জানা যাবে, মোট কত নাম বাদ গেল।
২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যে ৯৯.৭৫ শতাংশ পরিবারের হাতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছেছে। পূরণ করা ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে ৪ কোটির বেশি, যা প্রায় ৫৯ শতাংশ। বাকি কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।
এর মধ্যেই উঠে এসেছে একাধিক অসঙ্গতির অভিযোগ। পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের বাসিন্দা মায়ারানি গোস্বামীর নামে নথিতে ৪৪টি ভোটার পরিচয়পত্র থাকার ঘটনা প্রকাশ্যে এলে কমিশন জানায়, এমন সব ভুয়ো তথ্য খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। আবার ঠিকানা পরিবর্তনের কারণে অনেকের কাছেই তিন-চার বার গিয়ে বিএলওরা কাউকে পাননি। এসব মিলিয়েই বাদ পড়ার সংখ্যা আপাতত ১০ লক্ষ বলে ধরা হয়েছে।
এসআইআরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে। বিজেপির অভিযোগ, এই সংশোধন শেষে রাজ্যে এক কোটি ভোটারের নাম বাদ যাবে, যার মধ্যে ‘অনুপ্রবেশকারী ভোটার’-ও রয়েছে বলে দাবি শুভেন্দু অধিকারীর। তবে কমিশন এখনও ‘অনুপ্রবেশকারী’ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন, ৪ ডিসেম্বর ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন, এবং এই সময়সীমার কোনও পরিবর্তন হবে না। কমিশন আরও জানিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও পূর্ব মেদিনীপুরে এসআইআরের কাজ সবচেয়ে এগিয়ে। উত্তর ২৪ পরগনার গোসাবায় ১২১ জন বিএলও ইতিমধ্যেই ১০০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছেন।
গত ৪ নভেম্বর রাজ্যে ঘরে ঘরে এনুমারেশন ফর্ম বিলির কাজ শুরু হয়। মোট ভোটার সংখ্যা ৭ কোটি ৬৬ লক্ষের বেশি হলেও এখনও প্রায় ২ লক্ষ মানুষের হাতে ফর্ম পৌঁছনো বাকি। ডিজিটাইজেশনও ৪১ শতাংশ ফর্মে হয়নি। হাতে সময় কম, কাজ চলছে যুদ্ধ-কালীন তৎপরতায়।










