শ্রয়ন সেন
আজ (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডা উপকূলে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’। ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিমি বেগে (ঝোড়ো হাওয়া ১১০ কিমি পর্যন্ত) বয়ে যাবে বাতাস। উপকূল অতিক্রমের পর এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে ভেতরের দিকে অগ্রসর হবে। ইতিমধ্যেই এর মেঘ-পুঞ্জ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে—ফলে মঙ্গলবার থেকেই বৃষ্টির পর্ব শুরু হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
ভূমি স্পর্শ ও পরবর্তী গতিপথ
‘মোন্থা’ আজ বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাডার কাছে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। এরপর এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে দক্ষিণ ওড়িশা ও ছত্তিশগড় সীমান্ত পার হয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে বাঁক নেবে। পরে দুর্বল হয়ে উত্তরবঙ্গ, নেপাল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের উপর দিয়ে যাবে। স্থলভাগে প্রবেশের পর এটি দ্রুত শক্তি হারাবে—প্রথমে গভীর নিম্নচাপে, পরে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে, এবং শেষে ঘূর্ণিবাতাসে পরিণত হবে।
অন্ধ্র, তেলঙ্গনা ও ওড়িশায় ব্যাপক বৃষ্টি
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর তেলঙ্গনা, দক্ষিণ ওড়িশা ও দক্ষিণ ছত্তিশগড়ে। ২৮ ও ২৯ অক্টোবর ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে। দক্ষিণ ওড়িশার পাহাড়ি জেলা, বিশেষ করে কোরাপুটে, বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি চলবে নভেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত
যদিও ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গকে আঘাত করবে না, তবু এর বাহ্যিক বৃষ্টিধারা ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের আকাশে ঢুকে পড়েছে। মঙ্গলবার থেকেই কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে মেঘলা আকাশ ও হালকা বৃষ্টি শুরু হবে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, রাজ্যে তিন দফায় বৃষ্টিপাত হবে—
১. কলকাতা, সংলগ্ন জেলা ও উপকূল অঞ্চল
- ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু।
- ২৯ অক্টোবর থেকে বৃষ্টি বাড়বে।
- ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে মাঝারি বৃষ্টি।
- কোথাও কোথাও স্বল্প সময়ের ভারী বর্ষণ হতে পারে, তবে বড় কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই।
- ১ নভেম্বর পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বৃষ্টি চলবে, পরে ধীরে ধীরে কমে যাবে।
২. পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গ
- বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও বর্ধমান জেলাগুলিতে তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টি হবে।
- ২৯ ও ৩০ অক্টোবর মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
- ঝড়ো হাওয়া না থাকলেও অবিরাম বৃষ্টির কারণে কিছু নিম্নচাপ-জনিত অসুবিধা হতে পারে।
৩. উত্তরবঙ্গ ও পাহাড়ি এলাকা
- ৩০ ও ৩১ অক্টোবর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।
- জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
- পাহাড়ি এলাকায় ৩১ অক্টোবর খুব ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
- সিকিমের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে তুষারপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতে পরবর্তী প্রভাব
ঝাড়খণ্ড ও উত্তরবঙ্গ পেরিয়ে দুর্বল মোন্থা উত্তর-পূর্ব দিকে এগোবে। ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সম্পূর্ণভাবে দুর্বল হয়ে বিলীন হবে এই ঘূর্ণিঝড়।
পশ্চিমবঙ্গের জন্য সারাংশ
- হালকা বৃষ্টি শুরু: ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে
- রাজ্যজুড়ে মাঝারি বৃষ্টি: ২৯–৩১ অক্টোবর
- দক্ষিণবঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টি
- উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি: ৩০–৩১ অক্টোবর
- সিকিমে তুষারপাত ও আসাম-মেঘালয়ে বৃষ্টি: ৩১ অক্টোবর–১ নভেম্বর
- সরাসরি আঘাত নয়, শুধু ঘূর্ণিঝড়জনিত বৃষ্টির প্রভাব










