অমল মাজি, এগজিকিউটিভ এডিটর
বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী শিবিরে জোরদার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে কংগ্রেসের ভোটার অধিকার যাত্রা। শাসারাম থেকে শুরু হয়ে ১ সেপ্টেম্বর পটনায় সমাপ্ত হওয়া এই যাত্রা শেষ পর্যন্ত শুধু যে কংগ্রেসের সংগঠনকে উজ্জীবিত করেছে তা নয়, রাহুল গান্ধীকেও বিরোধী মঞ্চে একটি আলাদা গুরুত্ব এনে দিয়েছে। এর ফলে আরজেডি এবং কংগ্রেসের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
রাহুল বনাম তেজস্বী: কে এগিয়ে?

যাত্রার প্রথমদিকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব ছিলেন মূল আকর্ষণ। কিন্তু ধীরে ধীরে রাহুল গান্ধী সামনে চলে আসেন। বিশেষ করে পটনার মহাসভায় রাহুল স্পষ্ট করে জানান, তিনি ভোট চুরির প্রসঙ্গে একটি বড় ঘটনা প্রকাশ্যে আসা পরিকল্পনা করছেন—যা তিনি “হাইড্রোজেন বোমা” বলে অভিহিত করেন। এতে জনতার মনোযোগ অনেকটাই রাহুলের দিকে ঘুরে যায়।
অন্য দিকে তেজস্বী যাদবও পিছিয়ে পড়তে চাননি। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, “আমি আছি সামনের সারিতে। সরকার আমাদের পথ অনুসরণ করছে।” তাঁর লক্ষ্য ছিল জনতার কাছে বোঝানো, আসল বিরোধী নেতৃত্ব তাঁর হাতেই। তবে জনসমাবেশের ছবিতে দেখা গেছে, রাহুলের চারপাশেই জনতার উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস বেশি, যা আরজেডি শিবিরে খানিকটা অস্বস্তি তৈরি করেছে।
আসন ভাগাভাগির জট

বিহারে বিরোধী জোটে সবচেয়ে বড় দল হল আরজেডি। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস রাজ্যে ৯টি আসনে লড়েছিল এবং মাত্র ৩টিতে জয় পায়। বিপরীতে আরজেডি তুলনামূলক ভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এ বার বিধানসভা আসন বণ্টন নিয়ে আরজেডি চাইবে মূল নিয়ন্ত্রণ রাখতে।
কিন্তু ভোটার অধিকার যাত্রা কংগ্রেসের পক্ষে এক ধরনের রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস এখন দাবি করতে পারবে, তারা রাজ্য-রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এবং রাজ্যে তাদের শক্তি আগের থেকে বেড়েছে। ফলে আসন ভাগাভাগির আলোচনায় কংগ্রেস এবার তুলনামূলক বেশি অংশ দাবি করবে, যা আরজেডির সঙ্গে সরাসরি সংঘাত তৈরি করতে পারে।
প্রশান্ত কিশোরের সতর্কবার্তা

রাজনৈতিক কৌশলবিদ থেকে নেতা হওয়া প্রশান্ত কিশোর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিহারে রাহুল গান্ধীর যাত্রা বাস্তবে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তাঁর মতে, রাহুলকে বিহারে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবে পটনার সমাবেশের পর দেখা যাচ্ছে, অন্তত কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সংগঠন ও সমর্থকদের মধ্যে এই যাত্রা নতুন প্রাণসঞ্চার করেছে।
জোট রাজনীতির চ্যালেঞ্জ

বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার সামনে এখন দ্বৈত চ্যালেঞ্জ—
১. জনসমর্থন ধরে রাখা ও বিজেপির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করা।
২. নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো।
রাহুল গান্ধীর যাত্রা যেমন কংগ্রেসকে নতুন দাবি তোলার সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি আরজেডিও মনে করছে, বিহারের জনসমর্থন মূলত তাদের দিকেই ঝুঁকছে। এই দ্বন্দ্বের যদি সমাধান না হয়, তবে নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটে বিভাজনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
সবমিলিয়ে, ভোটার অধিকার যাত্রা রাহুল গান্ধীর জন্য একটি রাজনৈতিক সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। তবে একাংশের মতে, এর ফলে আরজেডি-কংগ্রেস সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে পড়েছে। আগামী দিনগুলোতে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কী ভাবে এই দুই দল সমঝোতায় পৌঁছায়, সেটাই নির্ধারণ করবে বিহারে বিরোধী শিবিরের ভবিষ্যৎ।