Press "Enter" to skip to content

ডিম আগে না মুরগি আগে? বিজ্ঞানীদের হাতে এই জটিল ধাঁধার উত্তর

মুরগি না কি ডিম—প্রথমে কী এসেছিল? এই বহু পুরোনো ধাঁধার উত্তর এ বার হয়তো বিজ্ঞান পেয়ে গেছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় পাওয়া ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে ভ্রূণ গঠনের সক্ষমতা প্রাণীর উদ্ভবের আগেই বিকশিত হয়েছিল।

এই আবিষ্কার এসেছে এককোষী জীব ক্রোমোস্পাইরা পার্কিনসাই (Chromosphaera perkinsii)-এর উপর একটি গবেষণা থেকে। এই মাইক্রোব, যা একটি ইকথিওস্পোরিয়ান (Ichthyosporean) প্রজাতি, পৃথিবীতে একশো কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে আছে।

জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট মারিন অলিভেটা-এর নেতৃত্বে একটি গবেষক দল পর্যবেক্ষণ করেন যে সি. পার্কিনসাই প্রাণীর ভ্রূণীয় বিকাশের মতোই একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।

সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বায়োকেমিস্ট ওমাইয়া ডুডিন বলেন, “যদিও সি. পার্কিনসাই একটি এককোষী প্রজাতি, এর এই আচরণ প্রমাণ করে যে বহুকোষী সংহতি ও পার্থক্যকরণের প্রক্রিয়া প্রাণীর উদ্ভবের আগেই উপস্থিত ছিল।”

গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, সি. পার্কিনসাই একটি প্রক্রিয়া পালিন্টমি (palintomy)-এর মধ্য দিয়ে যায়, যা প্রাণীর ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ের বিকাশের মতো। এই বিভাজনের পরে, জীবটি কোষের একটি গুচ্ছ তৈরি করে যা প্রাণীর ভ্রূণের ব্লাস্টুলা পর্যায়ের সঙ্গে মিলে যায়। বিস্ময়ের বিষয় হল, এই কলোনির অন্তত দুটি ভিন্ন ধরনের কোষ শনাক্ত করা গেছে।

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইকথিওস্পোরিয়ানরা প্রাণীর বংশধারা থেকে একশো কোটি বছরেরও বেশি আগে বিভক্ত হয়েছিল। সি. পার্কিনসাই-এর প্রজনন প্রক্রিয়া ও প্রাণীর ভ্রূণ বিকাশের মধ্যে সাদৃশ্য নির্দেশ করে যে ভ্রূণ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনগত প্রোগ্রামিং জটিল বহুকোষী প্রাণীর উদ্ভবের অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল।

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে এটি সমান্তরাল বিবর্তন (convergent evolution)-এর উদাহরণও হতে পারে। যেখানে বিভিন্ন জীবের মধ্যে স্বাধীনভাবে একই বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে। অন্য ইকথিওস্পোরিয়ানদের মধ্যে সি. পার্কিনসাই-এর এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়নি, যা এটি পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া বৈশিষ্ট্য না কি সমান্তরাল বিবর্তনের ফল, তা নির্ধারণ করা কঠিন করে তুলেছে।

যাই হোক, এই আবিষ্কার প্রাণীর বহুকোষী গঠনের বিবর্তনী প্রক্রিয়া বোঝার নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। গবেষকরা মনে করেন, সি. পার্কিনসাই নিয়ে আরও গবেষণা করলে প্রাথমিক জীবের জিনগত গঠনের বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে এবং প্রাণীজগতের বিবর্তনের পথ আরও পরিষ্কার হবে।

এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। শুধু প্রাণীর জীবনের উৎপত্তি নিয়ে নতুন তথ্যই দেয়নি, বরং আমাদের পৃথিবীর সহজতম জীবগুলির অসাধারণ জটিলতা এবং অভিযোজনক্ষমতা তুলে ধরেছে।

More from লাইফস্টাইলMore posts in লাইফস্টাইল »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *