ওজন কমানো—এই শব্দটা শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে জিম, ডায়েট চার্ট আর না খেয়ে থাকার ছবি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু খাবার বাদ দেওয়া বা ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যায়াম করলেই ওজন কমে না। বরং কিছু ছোট ভুল পুরো প্রক্রিয়াটাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. পাল মণিক্কম জানিয়েছেন, ওজন কমানোর পথে মানুষ যে পাঁচটি সাধারণ ভুল করেন, সেগুলি এড়াতে পারলেই ফল পাওয়া সহজ হবে।
১. খাবার না খাওয়া
ডা. মণিক্কমের মতে, বিশেষ করে প্রাতঃরাশ বাদ দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। খাবার না খেলে শরীর ‘survival mode’-এ চলে যায় এবং চর্বি জমাতে শুরু করে। এতে ওজন বাড়তেও পারে। একটি পুষ্টিকর প্রাতঃরাশ সারাদিনের এনার্জি ঠিক রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
২. “ডায়েট ফুড”-এর উপর ভরসা
“সুগার-ফ্রি” বা “ডায়েট” লেখা মানেই স্বাস্থ্যকর নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের খাবারে থাকে লুকোনো চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি, যা শরীরকে বিভ্রান্ত করে। এতে পেট ভরে না, বরং অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার ইচ্ছে বাড়ে। তাই প্রাকৃতিক খাবার—ফল, শাকসবজি ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট—নিয়মিত খাওয়াই শ্রেয়।
**৩. ঘুমকে অবহেলা করা
ডা. মণিক্কম বলেন, “ঘুম শরীরের পুনরুদ্ধারের সময়।” ঘুমের অভাবে ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রক হরমোন (ghrelin ও leptin) ভারসাম্য হারায়, ফলে ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
**৪. অতিরিক্ত কার্ডিও করা
কার্ডিও অনুশীলন হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো, কিন্তু শুধুমাত্র সেটির উপর নির্ভর করলে মাংসপেশির ক্ষতি হতে পারে। এতে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়। তাই কার্ডিওর পাশাপাশি স্ট্রেংথ ট্রেনিংও জরুরি। এতে চর্বি কমে, কিন্তু পেশি অটুট থাকে।
**৫. ফ্যাড ডায়েট অনুসরণ করা
দ্রুত ফলের আশায় অনেকে নানা রকম “ফ্যাড ডায়েট” শুরু করেন। প্রথমে ফল মিললেও তা টেকে না। এমন ডায়েট শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করতে পারে এবং পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। ধীরে ধীরে, সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের চাবিকাঠি।
সবমিলিয়ে ওজন কমানোর পথে ছোট ছোট পরিবর্তন, সঠিক খাবার বাছাই এবং সুষম রুটিনই আসল চাবিকাঠি। এই পাঁচটি ভুল এড়াতে পারলে ওজন কমানো হবে আরও সহজ, নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী।