অনলাইন কোলফিল্ড টাইমস, আসানসোল: গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ভোজপুরি গায়ক পবন সিংহের নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। পর দিন, তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী হতে পারছেন না তিনি। কী কারণে আসানসোল থেকে সরে দাঁড়ালেন পবন?
আসানসোল লোকসভা আসনে প্রার্থী হতে চান না বলে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন পবন সিং। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভাবে, আসানসোল থেকে ভোটে না লড়তে চাইলেও, বিহারের যে কোনো কেন্দ্র থেকে তিনি ভোটে লড়াই করতে চান বলে বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছেন।
পবন বিহারের আরা লোকসভা এলাকার বাসিন্দা। তাই সেই আসনে থেকেই বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না বিশেষ কারণে। ওই আসন থেকে বর্তমানে বিজেপি সাংসদ রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরকে সিংহ। তাই সেই আসনে পবনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। একদিকে আসানসোলে হিন্দিভাষী মুখের চাহিদা, অন্যদিকে পবনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে তাঁর নাম ঘোষণা করে দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু কোথাও একটা গরমিল রয়ে গিয়েছিল। যে কারণে নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ধাক্কা।
এ দিকে, পবন সিংয়ের নাম ঘোষণা হতেই আসানসোলের বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। ‘ললিপপ’ গায়কের নিন্দায় সরব হন ওখানের মানুষজন। অভিযোগ, বাংলার মহিলাদের নিয়ে ‘যৌন উদ্দীপক’, নারী ‘বিদ্বেষী’ গান গেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও এই তারকার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে ভোজপুরি সুপারস্টারের। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী জ্যোতি সিং এই তারকার বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ এনেছেন। এর পাশাপাশি পবনের প্রথম স্ত্রীয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও বিভিন্ন রকম চর্চা রয়েছে। এই অবস্থা তৈরি হওয়ায় সকালেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নেমেছিলেন বিজেপির আইটি সেলের ইনচার্জ অমিত মালব্য। কিন্তু তারপরও ঠেকানো গেল না।
পবন নিজে থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করলেও এর নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে বলে জানাচ্ছে সূত্র। শোনা যাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠতেই দলের অন্দরেও আলোড়ন পড়ে যায়। তা ছাড়া
পবন নিজে থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করলেও এর নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে বলে জানাচ্ছে সূত্র। শোনা যাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠতেই দলের অন্দরেও আলোড়ন পড়ে যায়। তা ছাড়া শোনা যাচ্ছে, পবনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর আসানসোল বিজেপি-র মধ্য়ে বিভাজন তৈরি হয়ে যায়। ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে কানাঘুষো শুরু করেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে এলাকার বেশ কয়েকজন সক্রিয় মুখকে সরিয়ে কেন বিহার থেকে প্রার্থী আনা হচ্ছে? সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ পবনকে জানানো হয় যাতে তিনি নিজেই ঘোষণা করেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে না লড়েন।
প্রখ্যাত গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে আসানসোলে প্রার্থী করে পর পর দুবার বাজিমাত করেছিল বিজেপি। এ বার সেই একই ফর্মুলা প্রয়োগ করেছিল বিজেপি। খানিকটা চমক দিয়েও অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী করা হয়েছিল ভোজপুরি গায়ক পবনকে। আসানসোল লোকসভা আসনে হিন্দিভাষী ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। এই হিন্দিভাষী ভোটারদের টানতেই বিজেপি পবনকে প্রার্থী করেছে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়র পরিবর্তে পবন সিংকেও আসানসোলের সামগ্রিক ভোটাররা কতটা এগিয়ে রাখবেন, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল-ই।
আসানসোল থেকে পবন-প্রস্থান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ‘অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং ক্ষমতা’-কে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘বাংলার জনতার অদম্য প্রতিবাদের জয়। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের অদম্য জেদ ও শক্তি।’ তবে, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন অবশ্য পবন-প্রস্থানকাণ্ডে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
Be First to Comment