মুম্বইয়ে এক বৈঠকে ইন্ডিয়া ব্লকের বিরোধী দলগুলোর নেতারা। প্রতীকী ছবি
কার চাহিদা কত? কে মেটাবে কার চাহিদা? উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই নিজের নিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিচ্ছে একের পর এক আঞ্চলিক দল। আর কত ধাক্কা সামলাবে বিজেপি-বিরোধী ইন্ডিয়া জোট! লিখলেন জয়ন্ত মণ্ডল
নীতীশ কুমার পুরোপুরি ডিগবাজি খেয়ে এখন বিজেপির ফ্রেন্ডলিস্টে। এই তো ক’দিন আগেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁকে তুলে ধরার গল্প নিয়ে সরগরম ছিল একাংশের মিডিয়া। এ দিকে. বাংলায় একাই একশো শতাংশ আসনে লড়বেন মমতা। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ, পঞ্জাবে কেজরির আপ এবং মহারাষ্ট্রে উদ্ধব সেনার জোটে থাকার কতটা ইচ্ছা রয়েছে, তা নিয়েও ধোঁয়াশা। সবমিলিয়ে কতিপয় ছোটো আঞ্চলিক দল ছাড়া কংগ্রেসের হাতে হাত মেলানোর মতো আর তেমন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না!
ইন্ডিয়া জোটের ভোটকৌশল: আসন বণ্টন জটে বিড়ম্বনা
কংগ্রেসের অন্দরে মতানৈক্য: বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে দলের অন্দরেই জাঁকিয়ে বসেছে মতানৈক্য।
আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মতের অমিল
বাংলা: তৃণমূলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে নারাজ তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাংলায় কোনও জোট নয় ৪২টি আসনেই একলা লড়বে তৃণমূল।
বিহার: নীতীশ কুমার জোট ছেড়েছেন। এক বছরের মধ্যেই ফের নীতি বদল করেছেন নীতীশ। ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে ডিগবাজি খেয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পড়েছেন বিজেপি-তে।
পঞ্জাব: আপ একা লড়বে। জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নয় বরং একলা চলার নীতি ঘোষণা করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পঞ্জাব এবং চণ্ডীগড়ে লোকসভা নির্বাচনে একলা লড়বে আপ। ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে কোনও আসন ভাগাভাগি হবে না।
উত্তরপ্রদেশ: প্রার্থী ঘোষণা অখিলেশের। আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি এখনও।এর মাঝেই নিজের দলের ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন অখিলেশ যাদব।
মহারাষ্ট্র: শিবসেনা বেঁকে বসেছে। সেই কবে শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত জানিয়ে দিয়েছেন, “শিবসেনা ভেঙে যাওয়ার পরেও আমরা মহারাষ্ট্রে বৃহত্তম দল। আমরা ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। গত নির্বাচনে আমরা এর মধ্যে ১৮টি আসনে জয়ী হয়েছিলাম। এ বারও আমরা একই সংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব”।
কংগ্রেসের দাবি
উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে সঠিক ভাবে আসন বণ্টনের উপর জোর দিয়েছে দল। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৫ থেকে ২০টিতে প্রার্থী দিতে চাইছিল কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে ১৬ থেকে ২০টি আসন, বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে ৪ থেকে ৮টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ৬ থেকে ১০টি আসনে লড়তে চেয়েছিল কংগ্রেস। এ ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭টি, পঞ্জাবের ১৩টি আসনের মধ্যে ৬টি, দিল্লির ৭টি আসনের মধ্যে ৩টি, তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের মধ্যে ৮টি, কেরলে ২০টি আসনের মধ্যে ১৬টি এবং জম্মু ও কাশ্মীর ২টি আসনের দিকে তাকিয়ে ছিল কংগ্রেস।
অন্যান্য দলের অবস্থান
এই রাজ্যগুলির শাসক অথবা প্রাক্তন শাসক দল আবার কংগ্রেসকে খুব একটা বেশি আসন ছাড়তে চাইছে না। তারা নিজের নিজের মতো করে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। অন্য দিকে, বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেসও নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনের গোঁ ধরেছে।
ভবিষ্যৎ অথবা ফলাফল
আসন বণ্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ভেস্তে যেতে বসেছে। কোথায় কোন দলের আসন বেশি হবে, তা নির্ধারণের জন্য নির্দিষ্ট ফরমুলা তৈরি না করার জন্যই এই পরিস্থিতি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল। কিন্তু বাইরে থেকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে, জোটের সব দলের অবস্থান অনুযায়ী তাদের সমান সমান গুরুত্ব হয়তো দেওয়া হয়নি।
ফলে আসন বণ্টন জট সমাধান না হলে ইন্ডিয়া জোটের ভোটকৌশল সামগ্রিক ভাবে ব্যাহত হতে পারে। জোট নেতৃত্ব জানতেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোটের সাফল্য নির্ভর করছে এই জট সমাধানের উপর। কিন্তু সদিচ্ছার অভাব হয়তো ছিল। এখন তো রাজনৈতিক মহলের একাংশ এমনও প্রশ্ন তুলছেন, শেষ পর্যন্ত লোকসভার আগে ভেঙে যাবে না তো ইন্ডিয়া জোট?
Be First to Comment