Press "Enter" to skip to content

ঘুঁটে দিয়ে এক অভিনব প্রৈবাদিক গবেষণা

জয়ন্ত মণ্ডল

এখন আর নিত্যদিনের সংসারে ঘুঁটে সে ভাবে ব্যবহার হয় না। নামমাত্র কিছু কাজে ঘুঁটের ব্যবহার টিকে আছে। অথচ, এই ঘুঁটেই ছিল একসময় রান্নার প্রধান জ্বালানি। শুধু ঘুঁটে কেন, একসময় রান্নার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত কয়লা দিয়ে তৈরি গুল এখন গৃহস্থের রান্নাঘরে নো এন্ট্রি। তা যাইহোক এই ঘুঁটে কিনতেই একটি দোকানে এসে হাজির এক ক্রেতা। দোকানদার ঝাঁপ খুলেই বসেছিল। বিক্রিবাট্টা তেমন নেই। দোকানদারকে ওই ক্রেতা বলল, দাদা, ঘুঁটে পাওয়া যাবে?

দোকানদার বলল, হ্যাঁ। কতটা নেবেন?

ক্রেতা লোকটি বলল, একটা হলেই চলবে।

দোকানদার বলল, একটা! একটা মাত্র ঘুঁটে কিনে কী করবেন দাদা?

ক্রেতা বলল, একটা বিশেষ কাজ আছে। সে আপনি বুঝবেন না।

দোকানদার বলল, সে ঠিক আছে। আপনি যখন কিনতে চান, আমি দিয়ে দিচ্ছি। তবে একটা ঘুঁটে তো কেউ কেনে না। তাই জানার ইচ্ছে হল।

ক্রেতা বলল, দেখুন, এই একটা ঘুঁটে দিয়েই আমি এমন একটা কাজ করতে চলেছি, যাতে একটা বিপ্লব ঘটে যাবে।

দোকানদার অতশত বোঝে না। তবে বিপ্লব কথাটা শুনে সে একটু থম মেরে গেল। বলল, বিপ্লব! মানে ঘুঁটে বিপ্লব?

ক্রেতা লোকটা বলল, হ্যাঁ, বিপ্লব। সে এমন এক বিপ্লব, যাতে আপনি তো বটেই এই দুনিয়ায় আরও যত ঘুঁটে বিক্রেতা আছে, সবাই একেবারে মালামাল হয়ে যাবে। আসলে এই একটা ঘুঁটে দিয়ে আমি একটা গবেষণা করতে চলেছি। এই গবেষণা দেখার পর ঘুঁটে কিনতে আপনাদের দোকানের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যাবে। ঘুঁটে বিক্রি করে আপনি কোটিপতিও হয়ে যেতে পারেন।

দোকানদারের অবাক হওয়া আরও বাড়ল। সে বলল, ঘুঁটে দিয়ে গবেষণা! আর সেই গবেষণা থেকে আমি মালামাল। দাদা, একটা কেন, আপনি একশোটা ঘুঁটে নিয়ে যান, একেবারে ফ্রি-তে।

ক্রেতা লোকটা বলল, আরে এখনই এত উতলা হবেন না। আগে তো আমি এই প্রৈবাদিক গবেষণাটা করি। তার পর দেখবেন….।

এই প্রৈবাদিক গবেষণা কথাটা জীবনে কোনো দিন শোনেনি দোকানদার। সে আরও অবাক হল। জানার ইচ্ছাও প্রবল হল। বলল, দাদা, এই প্রৈবাদিক গবেষণাটা কী? মানে যদি আপনি বলেন।

ক্রেতা বলল, দেখুন, এখনই এতকিছু ফাঁস করে দেওয়া যাবে না। কারণ, এই গবেষণার আরও একটা মূল উপকরণ আমাকে জোগাড় করতে হবে। সেটা না হলে এই গবেষণা কোনো মতেই সম্ভব হবে না।

দোকানদার বলল, দাদা, আর কী লাগবে আপনি আমাকে বলতে পারেন। আমি যদি পাই তো আপনার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসব।

ক্রেতা বলল, হ্যাঁ, আপনিই ঠিক লোক। আপনিই পারবেন ওটা আমাকে জোগাড় করে দিতে। শুনুন, আমার এই প্রৈবাদিক গবেষণার জন্য একশো অথবা পঞ্চাশ গ্রামের মতো গোবর লাগবে। পারবেন জোগাড় করে দিতে?

দোকানদার বলল, সে আর কী এমন ব্যাপার। আমাকে যে বুড়িটা ঘুঁটে দিয়ে যায়, তাকে বললেই গোবর এসে যাবে। ঠিক আছে, আপনার বাড়ির ঠিকানাটা দিয়ে যান, আমি নিজে আপনার বাড়িতে গিয়ে গোবর দিয়ে আসব। আপনি বলছেন, আপনার এই গবেষণা থেকে আমি মালামাল হয়ে যাব, তা হলে এটুকু আর করতে পারব না?

ক্রেতা লোকটা দোকানদারকে নিজের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে এল। পর দিনই দোকানদার গিয়ে লোকটার বাড়িতে কিছুটা গোবর দিয়ে এল। সে দোকানদারকে বলল, আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে যান। আমি আপনাকে সব পাঠিয়ে দেব।

দোকানদার বেশ খুশি মনেই দোকানে চলে এল। আর অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগল। তার হোয়াটসঅ্যাপে লোকটা এমন কিছু পাঠাবে, যাতে সে মালামাল হয়ে যাবে।

এ ভাবে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। এক দিন এল সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত। টিং করে আওয়াজ হয়ে দোকানদারের মোবাইলে সেই লোকটার একটা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢুকল। একটা ইউটিউব লিঙ্ক। দোকানদার খুলে দেখল একটা ভিডিও রয়েছে। শুরুতেই লেখা ঘুঁটে দিয়ে এক অভিনব প্রৈবাদিক গবেষণা। দোকানদার ভিডিও দেখতে শুরু করল। যেখানে লোকটা টেবিলের এক দিকে একটা স্টিলের পাত্রে রেখেছে ঘুঁটে আরেক দিকে এক তাল গোবর। এর পর এটা-ওটা-সেটা বকছে। বলছে, আজ আমি আপনাদের সামনে সেই প্রবাদ প্রমাণ করে দেখাব, যেটা আমরা প্রায়শই ব্যবহার করে থাকি। ইত্যাদি। এর পর লাইটার দিয়ে ঘুঁটেটাতে আগুন ধরিয়ে দিল। লোকটা পুরো ঘটনার ধারাভাষ্য দিয়ে চলেছে। বলছে, ‘দেখুন, এই যে ঘুঁটেতে আমি আগুন ধরিয়ে দিলাম, এ বার কী ঘটে। পাশেই রয়েছে গোবর। আপনারা ভালো করে দেখুন, ঘুঁটে পুড়তে দেখে গোবর কেমন খিল খিল করে হেসে উঠবে। চোখ সরাবেন না কিন্তু…দেখুন দেখুন গোবর কী ভাবে হো হো করে হাসবে। আপনারা সেই কবে থেকে শুনে আসছেন, ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে। এ বার চোখের সামনে দেখবেন ঘুঁটে পুড়ছে আর গোবর হি হি করে হাসছে’।

গোবর কি সত্যিই হাসছে? হ্যাঁ…ওই তো গোবর হাসছে। ভিডিওটা এডিট করে গোবরকে হাসাচ্ছে লোকটা। যা দেখে দোকানদারও না হেসে থাকতে পারছে না। এই ভিডিওটা কয়েক ঘণ্টায় মিলিয়ন ভিউ পেয়ে গেছে। হাজার হাজার লাইক-কমেন্ট। দোকানদারও একটা হাসির ইমোজি দিয়ে দিল। মালামাল, কোটিপতি হওয়ার কথা সে কখন যেন ভুলে গেছে। তার দেওয়া ঘুঁটে আর গোবর দিয়ে তৈরি এমন একটা সাড়া ফেলে দেওয়া ভিডিও! ভাবা যায়! এ কথা ভেবেই সে যেন কেমন একটা গর্ব গর্ব অনুভূতিতে ডুবে গেল। বাড়ির লোক, বন্ধুবান্ধব, সবাইকে ভিডিওটা শেয়ার করতে শুরু করে দিল। সঙ্গে লিখে দিল, ‘আমার দেওয়া গোবর কেমন দেখুন আমারই দেওয়া ঘুঁটেকে পুড়তে দেখে হাসছে’!

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *