Home / প্রবন্ধ / এন্ডোফ্রেজারের বাংলো: ফ্রেজারগঞ্জে সমুদ্রের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের এক অধ্যায়

এন্ডোফ্রেজারের বাংলো: ফ্রেজারগঞ্জে সমুদ্রের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের এক অধ্যায়

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়

সমুদ্রের ঢেউ ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে এক শতাব্দীর ইতিহাস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের ফ্রেজারগঞ্জে আজও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশ শাসনের শেষ সাক্ষী — এন্ডোফ্রেজারের বাংলো। কিন্তু ক্রমাগত ভূমিক্ষয় ও প্রশাসনিক উদাসীনতায় বিলীন হতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।

ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার অদূরে অবস্থিত এই বাংলো একসময় ছিল ব্রিটিশ শাসক স্যার এন্ডোফ্রেজারের বিলাসবহুল আবাস। আজ তার ভগ্নাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক — সবারই একই প্রশ্ন, “এতটা ইতিহাস কি সংরক্ষণ করা যেত না?” প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বহু মানুষ।

ইতিহাস বলছে, ১৯০৩ সালে ওড়িশা থেকে বাংলার ছোটলাট হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন এন্ডোফ্রেজার। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা এক ছোট্ট গ্রাম, নারায়ণতলা, তাঁর নজর কাড়ে। সেই গ্রামের প্রেমে পড়ে গড়ে তোলেন এক বিশাল বাংলো ও নারকেল বাগান। পরবর্তীকালে তাঁর নামেই এই এলাকা পরিচিত হয় ফ্রেজারগঞ্জ নামে।

জনশ্রুতি আছে, কলকাতাগামী পথে জাহাজ দুর্ঘটনায় আহত হন ফ্রেজার সাহেব। তাঁকে উদ্ধার করে এক গ্রামীণ কিশোরী। পরে সেই কিশোরীর রহস্যজনক অন্তর্ধান আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে উপকূলের মানচিত্র। বঙ্গোপসাগরের ক্রমাগত জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয় হতে হতে আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন এন্ডোফ্রেজারের বাংলো। বিশাল নারকেল বাগান, বাংলোর চত্বর, সবই হারিয়ে গেছে সমুদ্রের তলায়। এখন কেবল অবশিষ্ট রয়েছে অতিথিশালার কিছু ইট-পাথরের ভগ্নাবশেষ—ইতিহাসের শেষ সাক্ষী হিসেবে।

১৯০৮ সালে ফ্রেজারের দায়িত্ব বদল এবং ১৯১১ সালে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লি সরিয়ে নেওয়ার পর এই অঞ্চল আরও বিস্মৃতির অন্ধকারে তলিয়ে যায়। স্বাধীনতার পরও কোনও সরকারই এই ঐতিহ্য রক্ষায় এগিয়ে আসেনি।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীর উদ্যোগে ফ্রেজার সাহেবের একটি মূর্তি স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছে। যদিও ইতিহাসপ্রেমী ও স্থানীয়দের দাবি, শুধু মূর্তি নয় — জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা হোক এই বাংলোর ধ্বংসস্তূপ, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে এই উপকূলের হারানো অতীতের কাহিনি।

সমুদ্র আজও তার ঢেউয়ে সেই অতীতের স্মৃতি ধুয়ে নিচ্ছে— আর ফ্রেজারগঞ্জের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রশ্নটি, “ইতিহাসকে কি আর এক বার বাঁচানো যাবে না?”

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *