বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর ঢাকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের কাছে অনুরোধ করেছে, যেন হাসিনাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়ার পর থেকে হাসিনা ভারতে রয়েছেন। এর আগেই হাসিনা এবং তাঁর প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করেছিল আদালত।
হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি। আদালত বলেছে, তিনি উত্তেজনামূলক বক্তব্য এবং হেলিকপ্টার, ড্রোন ও অস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্র-আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া গত বছর ৫ আগস্ট ঢাকার চকবাজার এলাকায় ছয় জন প্রতিবাদীকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের দাবি
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, “ভারত যেন অবিলম্বে এই দুই দোষী ব্যক্তিকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়।” দুই দেশের প্রত্যর্পণ (extradition) চুক্তি অনুযায়ী, ভারত তাদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য — এমন দাবি করেছে তারা।
বাংলাদেশ আরও বলেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী ঘোষিত কাউকে আশ্রয় দেওয়া ‘অবন্ধুত্বপূর্ণ’ আচরণ হিসেবে দেখা হবে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত বলেছে, তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নজরে রাখছে এবং শান্তি, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কথা বলবে। তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারত কোনও মন্তব্য করেনি।
ভারত কি হাসিনাকে বাংলাদেশে পাঠাবে?
আইনগতভাবে প্রত্যর্পণ চাওয়া হলে তা অনেক সময় মানা হয়। তবে এই ক্ষেত্রে ভারত হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে — এমন সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ: ভারতের আইন এবং দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তির কিছু শর্ত। এ ক্ষেত্রে ভারতের হাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেকটা স্বাধীনতা রয়েছে। বিশেষত যদি প্রমাণ হয় যে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বা অন্যায্য।
ভারত–বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি কী বলে?
২০১৩ সালে দুই দেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি করে। চুক্তিতে বলা আছে: দু’দেশেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে হবে (Dual Criminality)। অভিযোগ যে অপরাধে ধরা হয়েছে, সেই অপরাধ দু’দেশেই শাস্তিযোগ্য হতে হবে। হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলেও ভারতের আইন অনুযায়ী একই ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন — এটিকে ভারত অস্বীকারের ভিত্তি করতে পারে।
অন্যায় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলে প্রত্যর্পণ নাকচ করা যাবে। চুক্তির ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি দেখা যায়—অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত, অভিযোগ, অন্যায় বা অত্যাচারের আশঙ্কা আছে। অর্থা, অপরাধ রাজনৈতিক হলে প্রত্যর্পণ নাও হতে পারে। চুক্তির ৬ নম্বর ধারা রাজনৈতিক অপরাধে প্রত্যর্পণ না করার সুযোগ দেয়। তবে খুন, সন্ত্রাস, অপহরণ — এ ধরনের গুরুতর অপরাধকে ‘রাজনৈতিক’ বলা যাবে না।
ভারত নিজেই মামলা চালাতে চাইলে প্রত্যর্পণ নাকচ হতে পারে। চুক্তির ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ভারত চাইলে নিজ দেশে বিচার করতে পারবে এবং সেই অবস্থায় ফেরত পাঠানো লাগবে না।
সবমিলিয়ে, হাসিনার প্রত্যর্পণ অনায়াসেই অস্বীকার করতে পারে ভারত সরকার।










