মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছেন যে ইজরায়েল ও হামাস তাঁর গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মতি দিয়েছে, যা তিনি “ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব পদক্ষেপ” বলে বর্ণনা করেছেন। বিষয়টিকে তিনি দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন।
ট্রাম্প জানান, তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুসারে হামাস তাদের সব বন্দিকে মুক্তি দেবে, আর ইজরায়েল সেনা প্রত্যাহার করবে পূর্বনির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত। এই ঘোষণা আসে মিশরে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর, যেখানে উভয় পক্ষ একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়।
ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ লিখেছেন, “আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ইজরায়েল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। এর অর্থ, খুব শিগগিরই সব বন্দি মুক্তি পাবে এবং ইজরায়েল সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে, যা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।”
তিনি কাতার, মিশর ও তুরস্ককে মধ্যস্থতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীরা ধন্য।”
মিশরীয় সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি-বিনিময় ও মানবিক সাহায্য গাজায় প্রবেশের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের বন্দিদের ঘরে ফিরিয়ে আনব।”
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এই সপ্তাহের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেতে পারেন, “সম্ভবত রবিবার”, এবং তিনি মিশর ছাড়াও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যাওয়ার কথাও বিবেচনা করছেন।
এই শান্তি পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, বন্দি মুক্তি, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইজরায়েলের ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত। আলোচনায় ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তির প্রথম ধাপে হামাস ইজরায়েলের হাতে বন্দি প্যালেস্তেনীয় কয়েদিদের একটি তালিকা দিয়েছে। বিনিময়ে তারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় অপহৃত ৪৭ জন ইজরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে—যাদের মধ্যে কিছু জীবিত ও কিছু মৃত।
আলোচনায় অংশ নেয় হামাসের পাশাপাশি ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্তাইন (PFLP)-এর প্রতিনিধিরাও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন ইজরায়েলি নাগরিক নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়, যাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও গাজায় আছেন বলে জানিয়েছে ইজরায়েলি সেনা।
গাজায় ইজরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭,১৮৩ জন নিহত হয়েছেন, যার অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু—এই তথ্যটি জাতিসংঘের কাছে “বিশ্বাসযোগ্য” বলে বিবেচিত।
যদিও চুক্তির আগে পর্যন্ত গাজায় বোমাবর্ষণ থামেনি, ইজরায়েল সীমান্ত থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
হামাস সূত্রে জানা গেছে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মিশর–কাতার–তুরস্কের কাছ থেকে যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসানের নিশ্চয়তা চাইছে।
মিশরীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, হামাস ফাতাহ নেতা মারওয়ান বারঘুতি-সহ কিছু বিশিষ্ট বন্দির মুক্তির দাবিও তুলেছে।