আসানসোল এই বিরাট বিশ্ব সংসারে ঠোক্কর খেতে খেতে আজ জীবনের স্বাভাবিক চাহিদাগুলো অতি অল্প ওদের। সারা বছরে এই একটা দিন ওদের আনন্দ। তা হল ষষ্ঠীর বিকেলে আসানসোল ও বার্নপুর পুজো দেখতে বেরোনো। তাই হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার একটা। কেন না, বছরের বাকি অন্য দিনগুলিতে নিরাপত্তার জন্য আর হোম থেকে ওরা বেরোতে পারবে না ! তাই ষষ্ঠীর দিনই ওরা বছরের বাকি দিনগুলোর ‘সব আনন্দ’ পুষিয়ে নিল এই আজকের দিনে !
মামনি, রুপা, মেহেরুনা, আয়েশা, শামীমা, আশা টুডু, সুস্মিতা সরকার, বাহামণি, শামিমা, বর্ণালীরা মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়ালো এক প্যান্ডেল থেকে অন্য প্যান্ডেলে।
ওরা মানে আসানসোল ইসমাইলের “স্ব-শক্তি শক্তি সদন” র ( হোম ফর ওরফ্যান এন্ড ডিসট্রেস ওম্যাম) আবাসিকরা। এরা বলতে গেলে সবাই সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে নিপীড়িত ও অত্যাচারিত। মোট ৩৫ জন। এদের মধ্যে আংশিকভাবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীরাও আছেন। এদিন এই হোমের ৩০ জন আবাসিকা পূজা পরিক্রমাতে অংশগ্রহণ করে।
বিকেল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত এই ঠাকুর দেখার ব্যবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়।
প্রতি বছরের মতো তিনি এই বছরেও তাদের জন্য মিনিবাসের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর কথায়, এই মেয়েদের পাশে একটু দাঁড়ানো এই যা।
এই সবকিছুর পরিকল্পনায় রয়েছেন আসানসোল ইস্টার্ন রেলওয়ে বয়েজ হাইস্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র। যিনি গত ১০ বছর ধরে এইদিন এই মেয়েদেরকে নিয়ে আসানসোল ও বার্নপুরের এই পূজো পরিক্রমা করছেন। তার সঙ্গে থাকেন হোমের সুপারভাইজাররা। এবারে আছেন হোমের সুপারভাইজার সেরিনা মণ্ডল ।
বিকেলে বার্নপুরের নববিকাশ শুরু হয় এই পুজো পরিক্রমা। তারপর একে একে পুরানহাট, বার্নপুর নেতাজি সংঘ, এবি টাইপ, রাধানগর রোড এ্যাথলেটিক ক্লাব, রবীন্দ্রনগর উন্নয়ন সমিতি, কোর্ট রোড, কল্যাণপুর হাউজিং , আপকার গার্ডেন হয়ে ট্রাফিক কলোনি পুজো দেখা।
মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে এই ঠাকুর দেখার মাঝে রয়েছে টিফিনের ব্যবস্থা। যা করেন আসানসোল পুরনিগমের বোরো চেয়ারম্যান অনিমেষ দাস, আসানসোল রেল স্কুলের শিক্ষিকা রুমা মিশ্র ও প্রাক্তন কাউন্সিলর মিলন মণ্ডল।
সন্ধ্যেবেলায় বিশ্বনাথ মিত্র ও সেরিনা মণ্ডলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ট্রাফিক রেল কলোনি পুজো কমিটির তরফে। তারাই এই মেয়েদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন। তা সবশেষে তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। এরপরে ফিরে আসা সেই হোমে। এবছরের মতো পুজো দেখার শেষে, পরের বছরের জন্য অপেক্ষা। একদিনের জন্য, সামান্য কয়েক ঘন্টার জন্যে হল এতেই খুশি সবাই।
আর তাদের খুশিতে বিশ্বনাথ মিত্র বলেন, এটাই অনেক। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি, প্রতি বছর যেন, সবার সাহায্য নিয়ে এটা ওদের জন্য করে যেতে পারি।