আসানসোল : সাধারণত দুর্গাপুজোর আয়োজন হয় পাড়ার প্যান্ডেলে ও বাড়ির ঠাকুর দালানে। কিন্তু আসানসোল শহরে এই বছর তার ব্যতিক্রম হল।
আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগার বা জেলে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই খুশি জেলের আবাসিক বন্দিরা। কারণ দীর্ঘদিনের তাদের দাবি শেষ পর্যন্ত পূরণ হতে চলেছে। জানা গেছে, সব ধর্ম ,বর্ণ ও সম্প্রদায়ের বন্দিরা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পুজোর আয়োজনে জেল কর্তৃপক্ষের পাশে দাড়িয়েছেন।
মুলত বর্তমান জেল সুপার চান্দ্রেয়ী হাইত এই বছর আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে দুর্গাপূজো করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর এ উদ্যোগে অনুমতি দিয়েছে রাজ্য কারা দপ্তর।
জেল সুপার বলেন, ‘আমার চাকরি জীবন শুরু হওয়ার আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম প্রেসিডেন্সি জেলে। সেই প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির প্রথম পোস্টিং পাই আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগার বা জেলে । এখানে আসার পরে আমি এখানে বন্দিদের জন্য যেমন পাঠাগারের ব্যবস্থা করেছি, তেমনি তাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালু করেছি । জেলের আবাসিক বন্দিরা কয়েক মাস আগে আমার কাছে অনুরোধ করে বলেছিলেন ছোট করে হলেও, এখানে একটা দুর্গাপুজোর আয়োজন করার। তাদের অনুরোধ শুনে আমারও মনে হয়েছিল অন্যান্য অনেক জেল বা বিশেষ সংশোধনাগার আছে যেখানে দুর্গাপুজো হয়। তাহলে এখানে সরকারের অনুমতি নিয়ে ও যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে যদি পুজোর ব্যবস্থা করতে পারি। সেই মতো আমি রাজ্য সরকার ও কারাগার দপ্তরের কাছে আবেদন করি। তাতে কারা দপ্তরের অনুমতি পাই। বিদ্যুৎ দপ্তর এবং দমকল বাহিনীকে জানিয়ে অনুমতি নেওয়া হয়েছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে, আমার চাকরি জীবনের প্রথম পোস্টিং যেখানে, সেখানেই দুর্গাপূজোর আয়োজন করতে পেরেছি’।
তিনি জানান, একচালার সাবেকিয়ানার ছাপ আছে, এমন প্রতিমা পঞ্চমীর দিন অর্থাৎ শনিবার কুমারটুলি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। পুজোয় ছোট-বড় সবারই নতুন জামা কাপড় পড়ার ইচ্ছে থাকে। মহিলাদের জন্য সরকারিভাবেই নতুন শাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।এছাড়াও পূজোর সাথে জড়িত থাকা সবাইকে নতুন বস্ত্র দেওয়া যায় তার চেষ্টাও হচ্ছে।
কিন্তু কে হবে আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারের পুজোর পুরোহিত ? এই প্রসঙ্গে জেল সুপার বলেন, পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করবেন জেলেই থাকা এক বন্দি । আর তাকে সহযোগিতা করবেন জেলের কর্মী ও বন্দীরা। জেলের মহিলা বন্দিরা যেখানে পুজো হবে সেখানে আলপনাও দিয়েছেন । তারা এই কাজে খুবই খুশি। এছাড়াও দশমীর দিন একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। যেখানে আবাসিকরা সংগীত , নৃত্য ,আবৃত্তিতে অংশ নেবেন।
তিনি জানান, আজকের দিনে আসানসোল জেলে বন্দির সংখ্যা ৪০০ র কিছু বেশি। তার মধ্যে প্রায় ৩৫ জন মহিলা। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বেশ কিছু বন্দী আছেন আসানসোল জেলে। তাদের মধ্যে যারা ৮/১০ বছর ধরে আছেন তারাই জেল সুপারকে বলেছিলেন আগে কখনো এখানে দুর্গাপুজো হয়নি। তারা নিজেরা হয়তো একটু চেষ্টাও করেছিলেন। এবারও একাধিক বন্দি পুজোর জন্য আবেদন করেছিলেন।
বাইরে থেকে কি ঢাকি আনা হবে জেলের এই পুজোর জন্য ? জেল সুপার বলেন, নিরাপত্তার কারণেই কোনও ঢাকি বাইরে থেকে নিয়ে আসা হবেনা। তবে ঢাকের পরিবর্তে আলাদা মিউজিক ব্যবহার করা হবে। কারা দপ্তর থেকে এই পুজোর জন্য কিছুটা হলেও আর্থিক সাহায্য পাচ্ছি।
জেল সুপারের কথাতেই আরও জানা গেল, প্রথমবারের পুজোর প্রত্যেক দিন বিশেষ খাবারের মেনু থাকছে বন্দিদের জন্য। সপ্তমীতে মাছ, অষ্টমীতে পনির সহ নিরামিষ, নবমীতে মাছ ও দশমীতে থাকছে মাংস । প্রতিদিন আলাদা করে মিষ্টি এবং টিফিনের একটা আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠাকুরের জন্য পুজোর ফলের সঙ্গে চিঁড়ে দই ,নাড়ু তো থাকছেই।
জেল সুপার বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বন্দিদের সঙ্গে একসাথে যেন পুজোর কটা দিন আনন্দ করতে পারি, তারই একটা সামান্য চেষ্টা করছি। জেলের ভেতরে থেকেও যাতে তারা বুঝতে পারেন উৎসব সবার জন্য। সবাই মিলে কটা দিন একটু আলাদা থাকার চেষ্টা, এই যা’।