Home / খবর / জেলায় জেলায় / বাঘের কামড়ে মৃত ছয় মৎস্যজীবীর পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাই কোর্টের

বাঘের কামড়ে মৃত ছয় মৎস্যজীবীর পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাই কোর্টের

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলতলি: সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত মৎস্যজীবীদের পরিবারের জন্য সুখবর দিল কলকাতা হাইকোর্ট — শুক্রবারে এক ঐতিহাসিক রায়ে বাঘের কামড়ে প্রাণ হারানো ছয়জন মৎস্যজীবীর প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এপিডিআর (APDR) ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হয়ে মামলা লড়েছেন সিনিয়ার অ্যাডভোকেট কৌশিক গুপ্ত ও অ্যাডভোকেট শ্রীময়ী মুখার্জি। দুই সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এদিকে, এপিডিআরের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ-সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল বলেন, বনদপ্তরের সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে — রাজ্য সরকার ও বনদপ্তরকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর গোসাবার হরিদাসপুরে আরও এক মৎস্যজীবি চিরঞ্জিত মণ্ডল (৩৫) বাঘের আক্রমণে মারা যান; তাঁর দেহ এখনও বনদপ্তর মাঠ থেকে উদ্ধার ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি। এ বছরের শুরুতে সুন্দরবনবেষ্টিত এলাকায় মোট নয়জন বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন; এখনও পর্যন্ত একজনকেও নিয়মমাফিক ক্ষতিপূরণ পাননি। অনেকেই দ্রুত কাজে লাগানোর জন্য বন ভলান্টিয়ার নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন — ২০১৮ সালের সরকারি সার্কুলারের আওতায় আহতদের দু লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং ফরেস্ট ভলেন্টিয়ার নিয়োগের অঙ্গীকার থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি, অভিযোগ।

হাইকোর্টের এই রায়ের যাচাই-প্রক্রিয়া শেষে আদালত মোট সাতটির মধ্যে ছয়টি কেসে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ, বাঘে আক্রান্ত প্রতিটি পরিবারের হাতে দুই সপ্তাহের মধ্যে টাকা তুলে দিতে হবে। এপিডিআর ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই রায়কে স্বাগত জানালেও তাদের দাবি এখানেই থামে না। তারা বনদপ্তরের বিরুদ্ধে নিয়ে আসছে কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি দাবি —

১) বাঘের আক্রমণে মৃত পরিবারগুলিকে মৃত্যুর ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি প্রদানের স্পষ্ট নিয়ম করা হোক।
২) কোর বা বাফার এলাকায় পার্থক্য না করে সব নিহত ও আক্রান্তদের একইভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
৩) আক্রান্ত পরিবারের জন্য পারিবারিক পেনশন চালু করা হোক (প্রস্তাবিত পরিমাণ— মাসিক ১০,০০০ টাকা)।
৪) নিহতদের বাচ্চাদের শিক্ষার সমস্ত দায়িত্ব সরকারের পক্ষ থেকে নেবে।
৫) নদী-জঙ্গলভিত্তিক জীবিকাপ্রতিষ্ঠান থেকে মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ কার্যক্রম না চালানো হোক — জীবিকা ও অধিকার রক্ষায় স্থানীয় মানুষদের ওপর আঘাত করা চলবে না।

হাইকোর্টের রায় পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আনন্দ ছড়ালেও অনেকে সরকারি সহায়তার অনুপস্থিতি ও দীর্ঘ সময় ধরে নেমে থাকা দায়বদ্ধতার অভাব তুলে ধরেন। ২০১০ সাল থেকে সরকারি সাহায্য না পেয়ে আদালতে কষ্টসহ্য করে টাকা আদায়ের পথে দাঁড়াতে হয়েছে — এমনটি দাবি করেন মৈপিঠের মৃত রনজিৎ মাইতির স্ত্রী। মৈপিঠ-বৈকুন্ঠপুরের সুলতানা জানা (৫০) বলেন, বহু বছর ধরে বনদপ্তরের অনীহায় তাঁরা সাহায্য পায়নি; কোর্টের রায় তাঁর বাচ্চাদের জীবন নিয়ন্ত্রণে আনতে আলোর মতো কাজ করবে।

Tagged:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *