কোলফিল্ড টাইমস: দীর্ঘ ৪৩ বছর আত্মগোপনে থাকার পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) তেলঙ্গনার ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ জিতেন্দরের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন শীর্ষ মাওবাদী নেত্রী সুজাতা (পোথুলা পদ্মাবতী ওরফে কল্পনা, মাইনাক্কা, মাইনাবাই)।
৬২ বছর বয়সি সুজাতা ছিলেন মাওবাদীদের সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য, সেক্রেটারিয়েট সদস্য, সাউথ সাব-জোনাল ব্যুরোর সেক্রেটারি এবং দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির অধীনে ‘জনথনা সরকার’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত, যা মাওবাদীদের সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা হিসাবে পরিচিত।
জোগুলাম্বা গদওয়াল জেলার গট্টু মণ্ডলের পেনচিকালপাড়ু গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বাবা ছিলেন কৃষক ও পোস্টমাস্টার, মা গৃহিণী। তিন ভাই ও এক বোন আছেন, যাঁরা গ্রামে কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর স্বামী ছিলেন মাওবাদী নেতা মল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি, যিনি ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। তাঁদের এক কন্যা রয়েছে।
১৯৮২ সালে কলেজে পড়াকালীন আন্দোলনে যোগ দেন সুজাতা। প্রথমে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জন নাট্য মণ্ডলী’-তে কাজ করেন, পরে কিষেণজির সঙ্গে পরিচয় ও বিয়ে। ১৯৮৭ সালে দু’জনে দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে চলে যান। সেখানেই তিনি ক্রমশ বিভিন্ন পদে উন্নীত হন—এটাপল্লী দলের ডেপুটি কমান্ডার (১৯৮৮), দেবুরি দলের কমান্ডার (১৯৯৬), ডিভিশনাল কমিটি সদস্য ও পরবর্তী সময়ে এরিয়া কমিটির সেক্রেটারি, পরে স্টেট কমিটির সদস্য (২০০১)।
২০০৭ সালে মাওবাদী কংগ্রেসে যোগ দিয়ে দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন এবং ‘জনথনা সরকার’-এর দায়িত্ব নেন। ২০১৮ সালে পুরো দণ্ডকারণ্য অঞ্চলের দায়িত্ব, ২০২২ সালে সাউথ সাব-জোনাল ব্যুরোর সেক্রেটারি, আর ২০২৩ সালে সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। তিনি ‘পেথুরি’ নামে ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন।
তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চলতি বছরের মে মাসে সুজাতা সংগঠন ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্তা পাঠিয়ে জানান তিনি শান্তিপূর্ণভাবে পরিবারের সঙ্গে জীবনযাপন করতে চান।
তাঁর মাথার দাম ঘোষিত হয়েছিল ২৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকা তাঁকে এবার ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে তাঁকে দেওয়া হয়েছে। তেলঙ্গনা সরকার আত্মসমর্পণকারী অন্যান্য ক্যাডারের মতো তাঁকেও পুনর্বাসনের সুযোগ দেবে।